অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার উপায়

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি: মেক ইউজ অব

ডিজিটাল যুগে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা আগের চেয়ে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারণ ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডাটা সুরক্ষা আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রাইভেট ডাটা হচ্ছে এমন ধরনের তথ্য যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, ই-মেইল, ফোন নম্বর, মেসেজ, ই-মেইল, ব্রাউজিং, সার্চ প্রবণতা, লোকেশন ডাটা, আইপি অ্যাড্রেস ইত্যাদি। এজন্য ব্যবহারকারীদের অনলাইনে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া অপরিহার্য। 

১. নির্ভরযোগ্য ভিপিএন পরিষেবা ব্যবহার করা: নিষেধাজ্ঞায় থাকা ওয়েবসাইটে প্রবেশ ও আইপি অ্যাড্রেস গোপন রাখার ক্ষেত্রে ভিপিএন বেশ কার্যকর। মূলত অনলাইনে শেয়ার করা তথ্যকে সুরক্ষিত করা ছাড়াও ভিপিএনের বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। এ পরিষেবায় প্রায়ই কিল সুইচের মতো সুরক্ষা ফিচার থাকে, যা ভিপিএন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও ব্যবহারকারীর পরিচয় সুরক্ষিত রাখে। এছাড়া ভিপিএন পরিষেবাগুলো জিও-ব্লকিং কনটেন্ট দেখার সুযোগ করে দেয়ার পাশাপাশি কেনাকাটা ও ফ্লাইট বুকিংয়ের ক্ষেত্রেও অর্থ সাশ্রয়ে সাহায্য করতে পারে। বাজারে থাকা বর্তমানে কয়েকটি সেরা ভিপিএন হলো এক্সপ্রেসভিপিএন, নর্ডভিপিএন ও সার্ফশার্ক ভিপিএন। তবে পেইড ভিপিএন পরিষেবা বদলে প্রোটন ভিপিএনের ফ্রি ভার্সনও ব্যবহার করা যেতে পারে।

২. ব্রাউজারে সার্চ হিস্ট্রি সেভ না করা: প্রাইভেসি বা গোপনীয়তার জন্য অনেকেই ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজ করে থাকেন। তবে সার্চের ফল ব্রাউজারে সংরক্ষণ না করার অপশন সেট করা থাকলে বিভিন্ন ট্র্যাকার ও বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে অনলাইনে সুরক্ষিত থাকা যায়। তবে এটি কোন ব্রাউজার ব্যবহার করা হচ্ছে সেটির ওপর নির্ভর করে। যেমন ক্রোম ব্রাউজারে হিস্ট্রি সংরক্ষণ ছাড়াও ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপলের সাফারি ব্রাউজারে আলাদা করে একটি প্রাইভেট উইন্ডোতে ব্রাউজিং শেষে হিস্ট্রি ক্লিন করতে হয়।

৩. একটি নিরাপদ ই-মেইল পরিষেবা ব্যবহার করা: ব্যবহারকারীদের অনেক সংবেদনশীল তথ্য থাকে ই-মেইলে। যদিও কিছু ই-মেইল পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে থাকে, তবে বেশির ভাগ ই-মেইল পরিষেবাগুলো কোনো প্রকার এনক্রিপশন সুবিধা দেয় না। এজন্য একটি নিরাপদ ই-মেইল পরিষেবা ব্যবহার করা জরুরি। প্রোটন মেইল ও টুটা মেইল এমনি সুরক্ষিত ই-মেইল পরিষেবা। যেখানে পার্সোনাল প্ল্যান ব্যবহার বিনামূল্যে এনক্রিপ্টেড ই-মেইল পরিষেবা পাওয়া যাবে।

৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য শেয়ারে সতর্ক থাকা: ব্যবহারকারী তথা ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অতীত ইতিহাস ভালো নয়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই এমন অ্যাপগুলো মুছে ফেলা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা সংগ্রহ করে এমন সামাজিক মাধ্যমের অপশন বন্ধ রাখতে হবে। 

৫. মেসেজ এনক্রিপ্ট করা: বর্তমানে যোগাযোগের জন্য মেসেজিং জনপ্রিয় হলেও ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থার মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ও আই মেসেজের মতো অনেক মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা দিয়ে থাকে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ব্যবহারকারীদের এ ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহার করা উচিত। 

৬. ব্রাউজারে বেসিক কুকিজ সংরক্ষণের অনুমতি দেয়া: ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই ওয়েবসাইট কুকিজ সংরক্ষিত হয়। তবে ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ থাকতে হলে সব কুকিজ সংরক্ষণের অনুমতি দেয়া যাবে না। শুধু প্রয়োজনীয় কুকিজ সংরক্ষণের অনুমতি দেয়া হলে যেকোনো ওয়েবসাইট স্বাভাবিক ব্যবহার করা যাবে।

৭. গুগল থেকে সংবেদনশীল তথ্য মুছে ফেলা: গুগলে সার্চ করার মাধ্যমে যদি অনলাইনে বাড়ির ঠিকানার মতো সংবেদনশীল তথ্য থেকে থাকে তা অপসারণ করতে হবে। এসব তথ্য অপসারণে নির্ধারিত ওয়েবসাইট মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় রয়েছে। 

৮. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার এড়িয়ে চলা: অনলাইনের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে যেকোনো জায়গার পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা যাবে না। সুরক্ষিত নয় এমন নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকলে তথ্য চুরির ঝুঁকি রয়ে যায়। এমনকি এমন নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকলে অন্যরা ইন্টারনেটের কার্যক্রম দেখতে পারবে। যদি কোনো বিশেষ কারণে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের প্রয়োজন হয় তবে পাসওয়ার্ড ব্যবহার বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো সংবেদনশীল কার্যক্রম এড়িয়ে চলা উচিত হবে। এছাড়া সুরক্ষার জন্য ভিপিএনও ব্যবহার করা যায়। 

৯. লোকেশন বা অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য না দেয়া: বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশকিছু পারমিশন বা অনুমতি দিতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবহারকারীর লোকেশন বা অবস্থান। এক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই এমন অ্যাপের লোকেশন পারমিশন বন্ধ রাখাই ভালো। 

উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে যে কেউ সহজেই অনলাইনে নিজেদের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। মেক ইউজ অব অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন