‘‌অ্যাপল, মেটা, গুগল মাইক্রোসফটের চিপ ডিজাইন হয় বাংলাদেশেই’

ছবি : বণিক বার্তা

স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা গাড়ি, সব ধরনের যন্ত্রই সেমিকন্ডাক্টর বা চিপনির্ভর। সেমিকন্ডাক্টর খাতে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমানের হাত ধরে। দেশে এ শিল্পের শুরু, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

দেশে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের শুরুটা কেমন ছিল আর এখন কী অবস্থা?

আমার আগে দুটো কোম্পানি শুরু করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। আমি যখন শুরু করি, তখন বাংলাদেশে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে কোনো জ্ঞান, সচেতনতা ছিল না। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ অন্যান্য দেশ সেক্টরে অনেক এগিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এগোয়নি। সেজন্য বোঝানোও কঠিন ছিল যে সেমিকন্ডাক্টর কী জিনিস, কীভাবে কাজ করে। এখনো বোঝাতে পারছি না। মাত্র চারজন দিয়ে শুরু করে এখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত বাংলাদেশ চার দেশে আমার ব্যবসা রয়েছে। ২০০৭ সালে শুরুর সময়টায় অর্থনৈতিক মন্দার জন্য তেমন ব্যবসা ছিল না। ভাবছিলাম বন্ধ করে দিব কিনা। পরে নতুন উদ্যমে শুরু করি। ২০০৯-১০ সালের পর ব্যবসা ভালো হতে শুরু করে। এএমডি নামক আমেরিকার একটি কোম্পানি ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশে এক্সপ্লোর করছিল। তখন ভাবলাম বাংলাদেশে কাজ করা যায় কিনা। কারণ আমিসহ অনেক বাংলাদেশীই ওই কোম্পানিতে কাজ করতাম। আমি তাদের কনভিন্স করতে সক্ষম হই যে সেমিকন্ডাক্টর বাংলাদেশেও সম্ভব।

বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক বাজার ৬০০ বিলিয়ন ডলার। অবস্থায় আসতে ৭০ বছর লেগেছে। কিন্তু আগামী ছয় বছরে ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। বাংলাদেশে খুব বেশি কোম্পানি নাই, মাত্র সাত-আটটি কোম্পানি খাতে কাজ করে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজার ধরতে আরো কাজ করতে হবে।

সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের যেসব পণ্য তৈরি হয়, সেগুলো সম্পর্কে যদি ধারণা দিতেন। কাঁচামাল কোথা থেকে আসে, কী প্রক্রিয়ায় কাজগুলো হয়, সব ধরনের চিপ তৈরি হচ্ছে কি?

সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সেমিকন্ডাক্টর লাগে। ব্রেইনে পর্যন্ত চিপের ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের সব ক্রেতা দেশের বাইরের। আমরা সব ধরনের কাজ করি। যেমন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, কম্পিউটার, গাড়ি, অ্যাপলের মেমোরি। মেটা, গুগল, মাইক্রোসফটের চিপ ডিজাইন করেছি আমরা। এটি ক্রেতারাই ঠিক করে, তাদের কোন পার্টে কী কাজ করতে হবে। যেমন অ্যাপলের মেমোরিতে আমরা কাজ করেছি। তবে আমরা শুধু ডিজাইন করি, উৎপাদন পর্যায়ে যেতে পারিনি।

বর্তমানে বিশ্বের দুই জায়ান্ট যুক্তরাষ্ট্র চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। এর মূলে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বাজার দখলের প্রতিযোগিতা। মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ চেইন থেকে চীনা পণ্য সরিয়ে ফেলতে চাইছে। পরিস্থিতিতে এশীয় দেশগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?

আমেরিকান কোম্পানিগুলো চীন থেকে তাদের সব কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমেরিকান সরকারই তাদের উৎসাহ দিচ্ছে চীনে কারখানা না রাখার জন্য। চিপ প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে চায়না থেকে। এর পরবর্তী গন্তব্য হবে ভিয়েতনাম, ভারত আর আমরা যদি প্রস্তুত থাকতে পারি, তাহলে আমাদের কাছেও আসবে। আমরা এখনো প্রস্তুত নই। কারণ আমরা উৎপাদনে যেতে পারিনি। শুধু ডিজাইন নিয়ে কাজ করছি। উৎপাদনে যেতে পারলে, সেটি দেশের জন্য বড় এক সুযোগ বয়ে আনবে।

সেক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাজার ধরতে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

যারা পণ্যগুলো তৈরি করে তাদের বোঝাতে হবে যে এগুলো বাংলাদেশে বানানো সম্ভব। এখানে সব ধরনের সুযোগ সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন এএমডি কোম্পানি তাদের চিপগুলো টেস্ট করার জন্য থাইল্যান্ডে অনেক কারখানা করেছে। দুনিয়ার প্রায় সব কোম্পানি ম্যানুফ্যাকচারের জন্য মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর একটি অংশ হতে পারে। যেহেতু সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার বাড়ছে, তাই অনেক লোকের দরকার হবে। বাংলাদেশ হতে পারে একটি আদর্শ জায়গা। আমরা সে ওয়ার্কফোর্স তৈরি করতে পারছি কিনা, সেটিই একটি চ্যালেঞ্জ।

সরকারের বিশেষ কোনো নীতিসহায়তার প্রয়োজন রয়েছে কি?

সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। প্রত্যেক দেশে সরকার খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, বিনিয়োগ করছে এবং নীতিমালার মাধ্যমে একটা কাঠামো দাঁড় করিয়েছে। সরকার যদি ওয়ার্কফোর্স ডেভেলপমেন্টের জন্য আমাদের সহায়তা করে, সেটি অনেক বড় সুবিধা হবে। আরেকটি বিষয় হলো আমরা যে সফটওয়্যার ব্যবহার করি, সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল। ম্যানপাওয়ারের চেয়ে সফটওয়্যারের দাম বেশি। ভারত, চীন সরকার নিজে কিনে ওসব কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দেয়। কাজ সরকারের করা দরকার। আমরা এরই মধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন