বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আমেরিকানরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ক্রেতারা ইভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ছবি: বিবিসি

ক্লিন ওয়েলস ও র‌্যাচেল ওয়েলস দম্পতি। বসবাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নরম্যাল শহরে। নতুন একটি গাড়ি কিনতে চান এ দম্পতি। হালের জনপ্রিয় বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির (ইভি) পরিবর্তে তারা পছন্দ করছেন পেট্রলচালিত গাড়ি। মার্কিন এ দম্পতি সাধ্যের মধ্যে যা কেনার কথা ভাবছেন, সেটি পেট্রোল-ইঞ্জিনযুক্ত হোন্ডা অ্যাকর্ড। দাম ১৯ হাজার ডলার। তাদের ধারণা, এ মূল্যে পছন্দসই ইভি পাওয়া সম্ভব নয়।

মার্কিন বাজারের হালনাগাদ তথ্যের বরাতে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ওয়েলস দম্পতির জন্য ২৫ হাজার ডলারের একটি ইভি লোভনীয় অফার হতে পারত। কিন্তু বাজারে এ দামের ইভি নেই।

তথ্যমতে, ২০২৪ সালে মার্কিন বাজারে ৪০ হাজারের কম দামের মাত্র পাঁচটি নতুন ইভি মডেল এসেছে। অন্যদিকে স্থানীয় কারখানায় নির্মিত মার্কিন কোম্পানি রিভিয়ানের সবচেয়ে সস্তা ইভি মডেল আরওয়ারটির দামও ৬৯ হাজার ডলার।

বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির তুলনায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের গাড়ি কিনতে চাওয়া লাখ লাখ মার্কিনের মধ্যে ওয়েলসও একজন। তার বক্তব্য, ‘জীবনের এ পর্যায়ে এত দামের গাড়ি আমাদের জন্য নয়।’

যদিও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা ছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া মোট নতুন গাড়ির মধ্যে অর্ধেক থাকবে ইভি। তথ্য বলছে, গত বছর এ হার ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফোরকোর্টে গাড়ির স্টিকারের দাম, উচ্চ সুদহার, চার্জিং পরিকাঠামোসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে ক্রেতারা ইভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

তারা বলছেন, ইভি প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হচ্ছে এবং বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। কিন্তু বিক্রি বৃদ্ধির গতি মন্থর হয়েছে। ফলে অনেক গাড়ি প্রস্তুতকারক উৎপাদন পরিকল্পনা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। বাষ্পীয় ইঞ্জিনযুক্ত ও হাইব্রিড গাড়ির পক্ষে মার্কিন বাজারের জন্য তারা যে ইভি উৎপাদন করার পরিকল্পনা করেছিল তার সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা ও যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার সুরক্ষিত করতে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাইডেন প্রশাসন। যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে মার্কিন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণকে ২০০৫ সালের স্তরের নিচে অর্থাৎ ৫০-৫২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এটি অর্জনে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের পরিবর্তে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা ছিল বাইডেনের।

তবে চীন থেকে আমদানি ছাড়াই এ লক্ষ্য অর্জন করতে চান তিনি। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইভি উৎপাদনকারী ও ইভি খাতের অনেক কাঁচামালেরও প্রভাবশালী অংশীদার চীন।

সম্প্রতি একটি শিল্প নীতি ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন। যার আওতায় গাড়ি, ব্যাটারিসহ অন্যান্য কিছু পণ্যের চীনা নির্মাতাদের শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে চীনা পণ্য কিনতে চাওয়া ভোক্তাদের অতিরিক্ত ফেডারেল ট্যাক্স ইনসেনটিভ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটনের দাবি, নিজস্ব সরবরাহ চেইন উন্নতি করার জন্য এ কৌশল অবলম্বন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের নীতির ফলে মার্কিন গ্রাহকদের জন্য ইভির দাম বেড়ে যাবে। বিক্রি কমে যেতে পারে এবং ইভি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চীন এবং ইউরোপের পেছনে চলে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমনটি ঘটলে তা কেবল বাইডেন প্রশাসনের লক্ষ্যই নয়, বৈশ্বিক ইভির ব্যবহারকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন