ভূরাজনীতি ও ভুল নীতি

উদ্বৃত্ত থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এখন গ্যাস সংকটের দেশ

আবু তাহের

ছবি : বণিক বার্তা

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গ্যাসের মজুদ আছে প্রায় ২৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এক সময় বলা হতো দেশটিতে গ্যাসের যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে তা দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো যাবে অন্তত ১৫০ বছর। উদ্বৃত্ত গ্যাস দীর্ঘদিন চীন ও থাইল্যান্ডে রফতানি করেছে দেশটি। কিন্তু বর্তমান গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটির উত্তোলন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। মিয়ানমারে কার্যক্রম চালানো বন্ধ করে দিয়েছে পশ্চিমা বেশকিছু কোম্পানি। বর্তমানে ব্যাপক পরিমাণে উদ্বৃত্ত নিয়েও গ্যাস সংকটে ভুগছে দেশটির ভোক্তারা। 

যদিও একসময় গ্যাস খাতে মিয়ানমারের সম্ভাবনা অনুধাবন করে সেখানে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে বিদেশী তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। কিন্তু দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভূরাজনৈতিক সংকট মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ে। সর্বশেষ ২০২১ সালে দেশটির সামরিক জান্তার অভ্যুত্থান ও নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর দেশটির অস্থিতিশীলতা চরমে পৌঁছায়। রাজনৈতিক বিরোধ রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। বিদেশী কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া শুরু করে। গ্যাস খাতে ভয়াবহ ধস নামে। এর প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও।

গ্যাস উদ্বৃত্তের দেশ বলা হতো বাংলাদেশকেও। দেশে গ্যাস খাতে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত মজুদ প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। যদিও এ মজুদের মধ্যে ২১ টিসিএফের বেশি উত্তোলন হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের চালানো সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশে গ্যাস মজুদের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোভিত্তিক কনসালট্যান্সি ফার্ম গুস্তাভসন অ্যাসোসিয়েটস ২০১১ সালে গ্যাসের মজুদ নিয়ে এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। ওই প্রতিবেদনে গুস্তাভসন জানায়, দেশের গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৩৮ টিসিএফ। ৫০ শতাংশ মজুদ সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোয় এর পরিমাণ ৬৩ টিসিএফের কিছু বেশি। এ তথ্য ২০১১ সালে এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হলেও গ্যাস মজুদ নিয়ে গুস্তাভসনের তথ্য মোটেও বিশ্বাস করেনি সরকার। ওই প্রতিবেদনে ৫০ শতাংশ মজুদ সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোয় এর পরিমাণ ৬৩ টিসিএফের কিছু বেশি বলে জানানো হয়। তবে এসব প্রতিবেদন নিয়ে সরকার কোনো ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। বরং গ্যাসের নানামুখী সম্ভাবনার প্রস্তাব অতীতে দেয়া হলেও সম্ভাবনার বিপরীতে অনুসন্ধান জিইয়ে রেখে আমদানিনির্ভরতা বাড়িয়ে গ্যাস খাতের সংকট তৈরি করা হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গ্যাস খাতে বড় সম্ভাবনা সবসময় ছিল। এক সময় দুই দেশকেই গ্যাসে উদ্বৃত্ত বলে মনে করা হতো। কিন্তু গৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমার এখন প্রয়োজনমতো গ্যাস তুলতে পারছে না। আর মজুদ গ্যাসের অনুসন্ধান-উত্তোলনে বিনিয়োগ না করে এলএনজি আমদানিনির্ভর নীতি অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ। সম্ভাবনাময় দেশ দুটি এখন গ্যাস খাতে তীব্র সংকটে পড়েছে। দুই দেশেরই অর্থনীতিতে এখন প্রকট হয়ে উঠছে জ্বালানি নিরাপত্তার ঝুঁকি। 

বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নিয়েছে মিয়ানমারের সরকার। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে উত্তোলিত গ্যাসের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি পরিকল্পনা নতুন করে সাজিয়েছে দেশটির সরকার। মিয়ানমারের মতো বাংলাদেশ সরকারও চলতি বছরের মার্চে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানি এতে আগ্রহও প্রকাশ করেছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভূরাজনীতির বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া বঙ্গোপসাগরে সম্পদ আহরণের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।  

বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সবচেয়ে বড় সরবরাহ আসছে মার্কিন কোম্পানি শেভরনের অধীন বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে। মিয়ানমারেও কার্যক্রম ছিল কোম্পানিটির। কিন্তু দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে থাকলে সেখান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে থাই রাষ্ট্রায়ত্ত ফসিল ফুয়েল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান পিটিটি এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (পিটিটিইপি) জানায়, মিয়ানমারে শেভরনের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ইউনোকল মিয়ানমার অফশোর কোম্পানি (ইউএমওসি) দেশটির ইয়াদানা গ্যাস প্রকল্প থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। আর প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটির অংশ পিটিটিইপি ও স্থানীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করা হয়। সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশটির বৃহত্তম এ গ্যাস প্রকল্পে মজুদ এরই মধ্যে ফুরিয়ে আসছে। গৃহযুদ্ধের কারণে অন্যান্য গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলন ও অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরালো করার মতো পরিস্থিতিও এখন মিয়ানমারে নেই। 

দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে ইতিহাসটা বেশ পুরনো। স্বাধীনতাপরবর্তী তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ১৯৭৪ সালে প্রথম পিএসসির আওতায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর তৎপরতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নব্বইয়ের দশকে। পিএসসির আওতায় নব্বইয়ের দশকে দুটি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর আওতায় চালানো অনুসন্ধানের ফলাফল হিসেবে আসে পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের তথ্য। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ১৯৯৩ সালে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা। আটটি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়। পিএসসির আওতায় ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করে মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল। ১৫ ও ১৬ নম্বর ব্লকে তৎকালীন হল্যান্ডভিত্তিক গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জির সঙ্গে চুক্তি হয় পেট্রোবাংলার। এছাড়া ১৭ ও ১৮ নম্বর ব্লকে রেক্সউড অকল্যান্ড এবং ১২ নম্বর ব্লকে ইউনাইটেড মেরিডিয়ানের সঙ্গে চুক্তি হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির।

স্থলভাগে আরো বড় আকারে গ্যাস অনুসন্ধানে ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। পিএসসির আওতায় চারটি ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য এ দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এতে ৫ নম্বর ব্লকে যৌথভাবে শেল ও কেয়ার্ন এনার্জি, ৭ নম্বর ব্লকে ইউনোকল, ৯ নম্বর ব্লকে তাল্লোর সঙ্গে শেভরন-টেক্সাকো এবং ১০ নম্বর ব্লকে শেল ও কেয়ার্ন এনার্জি যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করে। এর আওতায় ৯ নম্বর ব্লকে আবিষ্কার হয় বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্র। তাল্লোর আবিষ্কৃত ওই গ্যাস ক্ষেত্রে ১ হাজার ১০০ বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফ) গ্যাস পাওয়া যায়।

পিএসসির আওতায় ২০০৮ সালে অফশোরের দুটি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ডিএস-৮ ও ডিএস-১০ ব্লকের আওতায় যৌথভাবে গ্যাস অনুসন্ধানে চুক্তি স্বাক্ষর করে কনোকোফিলিপস ও বাপেক্স। যদিও এতে বড় কোনো গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়নি। একই পদ্ধতিতে ২০১২ সাল পর্যন্ত আরো তিনটি ব্লকের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে এসএস-৪ ও এসএস-৯ ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশের সঙ্গে যৌথভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এবং এসএস-১১ ব্লকে সান্তোস-ক্রিসএনার্জির সঙ্গে বাপেক্সের যৌথ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলে। তবে এগুলোয়ও কোনো গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এরপর ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন-২০১০ (বিশেষ আইন)-এর আওতায় দুই ধাপে পসকো দাইয়ু করপোরেশনকে ডিএস-১০, ১১, ১২ ও এসএস-১০ ব্লক ইজারা দেয়া হয়। অফশোরে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ ছাড়া ইজারা দেয়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান ব্লক ছেড়ে চলে গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান করা যায়নি, তার প্রধানত কারণ অনুসন্ধানে অনাগ্রহ ছিল। অন্যদিকে আমদানির প্রতি মনোযোগও ছিল অনেক বেশি। ফলে গ্যাস ব্যবহার হয়েছে কিন্তু রিজার্ভের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে নানা সময়ে অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনীতিও কাজ করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর সমুদ্রে বড় আকারে গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটি করা যায়নি। সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর বিদেশী তেল-গ্যাস কোম্পানি এনে মিয়ানমার গ্যাস কূপ খনন করে গ্যাস পেয়েছে। অন্তত দু-দশকের বেশি সময় অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনৈতিক কারণে গ্যাস খাতে অনুসন্ধান করা যায়নি। গ্যাস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও বহু জায়গা অনুসন্ধানের বাইরে থেকেছে। এসব জায়গায় অনুসন্ধান করা গেলে অন্তত নিশ্চিত হওয়া যেত বাংলাদেশে গ্যাস আছে কি নেই। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হওয়ার পর মিয়ানমার ও ভারত অনুসন্ধান চালিয়ে গ্যাস পেয়েছে। বাংলাদেশ নানা অজানা কারণে গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারেনি। কেন করেনি বা করা যায়নি সেটি মোটা দাগে বলতে গেলে এক ধরনের অনাগ্রহ ও আমদানিনির্ভরতায় মনোযোগী হওয়াকেই দায়ী করতে হয়।’

২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি হয়। এরপর ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখাতে পারেনি। বরং ভারত গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান চালিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বড় সাফল্য পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে গভীর সমুদ্রে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুদ আবিষ্কার করেছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস করপোরেশন লিমিটেড (ওএনজিসি)।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তির পর ১৪ বছর পেরিয়েছে। ভারতের সঙ্গে এ সীমার নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ বছর আগে। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনে কোনো সাফল্যেরই দেখা পায়নি বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, সীমানা নিষ্পত্তির পর গভীর সমুদ্রে জ্বালানি অনুসন্ধানে মনোযোগ বাড়িয়েছে মিয়ানমার ও ভারত। বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। ফলে প্রয়োজনমতো বিদেশী বিনিয়োগও পেয়েছে। আর বাংলাদেশ সময়ক্ষেপণ করেছে আমদানিনির্ভর জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নে। গভীর সাগরে নিজ সীমানায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময়ে বিদেশী বিনিয়োগের মৌখিক প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হলেও এ নিয়েও দেখা যায়নি কার্যকর কোনো উদ্যোগ। ফলে দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকার জ্বালানি সম্ভার এখনো অনাবিষ্কৃতই থেকে গেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাস অনুসন্ধানে মিয়ানমার কিছুটা হলেও এগিয়েছিল। কিন্তু দেশটির সেনাশাসন ও নানাবিধ অভ্যন্তরীণ সংকটে এগোতে পারেনি। বাংলাদেশ গ্যাস অনুসন্ধানে বলা যায় মোটা দাগে ব্যর্থ হয়েছে। গ্যাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কখনো বিশ্বাস করতে পারেনি এখানে গ্যাস রয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক ও ভূরাজনীতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে পরতে পরতে। এসব করে অনুসন্ধানের বিচ্যুতি ঘটানো হয়েছে। অথচ এখানেও বড় বড় বিদেশী কোম্পানি ডেকে আনার সুযোগ ছিল। বড় সম্ভাবনাও ছিল।’

দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ না হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অন্তত দুই দশকে যে পরিমাণ গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করার কথা ছিল তার বাইরে গিয়ে বিপুল পরিমাণ আমদানিনির্ভরতা বাড়ানো হয়েছে। দেশের গ্যাস খাতে স্থানীয় অনুসন্ধান করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্সকে দিয়ে। কোম্পানির জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত অন্তত অনুসন্ধান ও জরিপে সব মিলিয়ে ৪-৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের দাবি, গত ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশে ছয়টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সময়ে ২১টি অনুসন্ধান কূপ, ৫০টি উন্নয়ন কূপ এবং ৫৬টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করা হয়েছে। এছাড়া ছয় হাজার কিলোমিটার থ্রিডি সিসমিক সার্ভে, ১ হাজার ৩৫৫ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন, জ্বালানি তেলের মজুদাগার এবং সরবরাহ পাইপলাইন নির্মাণ বাড়ানো হয়েছে।

দেশে গ্যাস খাতে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে পেট্রোবাংলা এখন ৫০টি কূপ খনন করছে। এর বাইরে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে আরো অন্তত ১০০টি গ্যাস কূপ খনন করতে চায়, যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন