দুবাইয়ের আবাসন খাতে ‘প্রাইস বাবল’ তৈরির ঝুঁকি

বণিক বার্তা ডেস্ক

দুবাইকে ধনীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হিসেবে দেখা হয় ছবি: অ্যারাবিয়ান বিজনেস

বিশ্বজুড়ে দাম কমলেও দুবাইয়ে গত চার প্রান্তিকে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় শহরটিতে বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ। তবে বৈশ্বিক ধনকুবেরদের অন্যতম গন্তব্য এ শহরের আবাসন খাত ‘প্রাইস বাবল’ বা অসংগতিপূর্ণ দাম বাড়ার ‘মধ্যম মাত্রা’র ঝুঁকিতে রয়েছে। সুইডেনভিত্তিক পরিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

সুইডেনভিত্তিক পরিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের ‘বাবল সূচক’ বলছে, শুধু দুবাই নয়, বিশ্বের অনেক শহরের আবাসন খাত ‘প্রাইস বাবল’ বা অসংগতিপূর্ণ মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে। দুবাইয়ের মতো বড় শহরগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম প্রধান গন্তব্য। পাচার হওয়া এসব অর্থ শহরটির বাড়ির দামের ব্যবধান তৈরি করে।

আবাসন খাতে ‘প্রাইস বাবল’ বা অসংগতিপূর্ণ মূল্যবৃদ্ধি খুব পরিচিত ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে আবাসনের মূল্য অর্থনীতির অন্য নিয়ামকগুলোর সঙ্গে সংগতি না রেখে অযৌক্তিক উপায়ে বাড়তে থাকে। বাজারের ঐতিহাসিক তথ্য থেকে আবাসন খাতের এ ধরনের প্রবণতা বোঝা যায়। স্থানীয় আয় ও বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে আবাসিক সম্পদের দামের অসংগতিকে প্রাইস বাবল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার উপসর্গ হিসেবে দেখা হয়। পাশাপাশি অর্থনীতিতে অতিরিক্ত ঋণদান ও বাড়তি নির্মাণ কার্যক্রমের মতো অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি দেখে এটি অনুমান করা যায়। তবে দামের আকস্মিক পতনের আগ পর্যন্ত এ ঝুঁকি শনাক্ত করা কঠিন। ব্যস্টিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের পরিবর্তন কিংবা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরবরাহ বাড়াসহ নানা কারণে দাম হঠাৎ কমতে শুরু করতে পারে।

ইউবিএস গ্লোবাল রিয়েল এস্টেট বাবল সূচক এ ধরনের প্রবণতার ভিত্তিতে কোনো সম্পত্তির অসংগতিপূর্ণ দামের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে। তবে এর সূচকের মাধ্যমে দাম কখন ও কীভাবে সংশোধন হবে, তা নির্ধারণ করা হয় না।

ইউবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দাম বাড়া সত্ত্বেও দুবাইয়ের আবাসন খাতে বিনিয়োগের মূল্যহ্রাস পেতে পারে, আবার বৃদ্ধিও পেতে পারে।’ 

বর্তমানে দুবাইয়ের পরিষেবা খাতের একজন দক্ষ কর্মী ২০২১ তুলনায় ৪০ শতাংশ কম বাসস্থান ক্রয় করতে সক্ষম। ওই বছর থেকে বিশ্বব্যাপী সুদহার বাড়তে শুরু করেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আবাসনে খাতের বর্তমান মূল্যস্তর উচ্চ সুদহারের কারণে টেকসই বলে মনে হচ্ছে না। বিশেষ করে যেসব শহরে বাড়ির নিজস্ব মালিকানার হার বেশি। তবে ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য কমলে সবসময় তা দরপতনের কারণও না-ও হতে পারে।

বাড়ির অভাব ও বাড়তি ভাড়ার কারণে শহরাঞ্চলে বাড়ির দাম স্থিতিশীল হচ্ছে। নতুন করে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি প্রদানের হার কমেছে। তবে সুদহার কমানোয় আবাসন খাত চাঙ্গা হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান লেখক ম্যাথিয়াস হোল্‌জে বলেছেন,”অনেক শহরে বাড়ির প্রকৃত মূল্য নিচে চলে গেছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণ করবে মূল্য আবার বাড়বে, নাকি স্থিতিশীল থাকবে।

এদিকে সূচকের তথ্য বলছে, বিশ্বব্যাপী বাড়ির দাম ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে। ২০২১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সুদহার বাড়ানো শুরুর পর আবাসন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। তবে সম্প্রতি আবারো সুদহার কমতে শুরু করায় আবাসন খাত চাঙ্গা হওয়ার প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকরা।

ইউবিএস গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ক্লাউডিও সাপুতেল্লি বলেন, ‘‌পূর্ববর্তী বছরগুলোয় উচ্চ মাত্রায় অসংগতিপূর্ণ দাম বাড়ার ঝুঁকিতে থাকা শহরগুলোয় সবচেয়ে বেশি মূল্য সংশোধন হয়েছে। বর্তমানে ফ্রাংকফুর্ট, মিউনিখ, স্টকহোম, হংকং ও প্যারিসে বাড়ির প্রকৃত দাম মহামারী-পরবর্তী সর্বোচ্চ দামের তুলনায় ২০ শতাংশ বা তারও বেশি কম। ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো ও আমস্টারডামে এ পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ।’

গত চার প্রান্তিকে বাড়ির দাম সামান্যই বেড়েছে। অন্যদিকে প্যারিস ও হংকংয়ে ব্যাপকভাবে দাম সংশোধন অব্যাহত রয়েছে। বিপরীতে দুবাই ও মিয়ামির মতো জনপ্রিয় শহরগুলোয় বাড়ির দাম আরো বেড়েছে। এছাড়া বাড়ির সংকট রয়েছে, এমন শহরগুলোর মধ্যে ভ্যাঙ্কুভার, সিডনি ও মাদ্রিদে প্রকৃত মূল্য গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূচকের তথ্য বলছে, মিয়ামিতে এ ধরনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া টোকিও ও জুরিখে গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঝুঁকির মাত্রা কমলেও এখনো অসংগতিপূর্ণ দাম বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস, টরন্টো ও জেনেভায় উচ্চ মাত্রার অসংগতিপূর্ণ দাম বাড়ার ঝুঁকি স্পষ্ট বলেও তথ্য দিচ্ছে ইউবিএস।

 অন্যদিকে আমস্টারডাম, সিডনি ও বোস্টন মধ্যম মানের ঝুঁকি রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন