সিলেট-চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে তরুণী ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সংগৃহীত

সিলেট-থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসে (৭২৪ নং ট্রেন) এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী (ক্যাটারিং সার্ভিস) প্রতিষ্ঠান এস এ কর্পোরেশনের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে রেলওয়ে পুলিশ। একই সাথে ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) আবদুর রহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

থানা ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেট থেকে রাতে ছেড়ে আসার পর মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে চারটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ট্রেনটি লাকসাম এলাকা পার হচ্ছিল। মূলত ক্যাটারিং সার্ভিসের তিন কর্মী ওই তরুণীকে খাবার গাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী তরুণী।  মঙ্গলবার রাত ১০ টাকায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসার পর ট্রেনটি বুধবার সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম স্টেশন পৌঁছায়। 

রেলওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছর বয়সী এক তরুণী উদয়ন এক্সপ্রেসে করে চট্টগ্রামে আসছিলেন। খাবার বগিতে অবস্থানের সময় এস এস কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মী তরুণীটিকে প্রথমে উত্যক্ত। পরবর্তীতে পরে ওই বগিতে ভোররাতের দিকে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী তরুণী। ওই তরুণী আত্মীয়দের সঙ্গে ভৈরবে থাকলেও তার বাড়ি বান্দরবান জেলায়। রেলের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, এই ঘটনায় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মী মো. জামাল (২৭), মো. শরীফ (২৮) ও মো. রাশেদ (২৭)।  

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের ঘটনাটি দুঃখজনক। বাংলাদেশ রেলওয়ের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী ক্যাটারিং সার্ভিস প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে যে বা যারা জড়িত রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।  

এ বিষয়ে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলামের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে থানার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন-উদয়ন এক্সপ্রেসের খাবার বগিতে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের চাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছে। তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস  সেন্টারে পাঠানো হবে। 

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, চলন্ত ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনা মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের পাশাপাশি বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জিআরপি থাকায় মামলা দায়ের হয়েছে। ট্রেনের গার্ডকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে ইতোমধ্যে এস এস কর্পোরেশনের ক্যাটারিং লাইসেন্স অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

এস এ কর্পোরেশন বাংলাদেশ রেলওয়ের ঠিকাদারি কাজ ছাড়াও অন্তত ১০ জোড়া ট্রেনের ক্যাটারিং ও অনবোট সার্ভিস পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং পরিচালনা, বিভিন্ন স্থাপনা লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা ও স্টেশনের দোকান ভাড়া প্রদান করে। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের অনবোর্ড সার্ভিসে প্রথমবারের মতো নারী স্টুয়ার্ড সার্ভিস দিয়ে আলোচনায় আসে এস এস কর্পোরেশন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে (৭২৪) তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় মেসার্স এস এ কর্পোরেশনের পরিচালনাধীন পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের উভয়পথে ক্যাটারিং সার্ভিসের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে রেলের বাণিজ্যিক বিভাগ। বুধবার সন্ধ্যায় পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (আর) মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত নোটিশে চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের ৭১৯/৭২৪ (পাহাড়িকা ও উদয়ন) এবং সিলেট-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের ৭২০/৭২৩ (পাহাড়িকা ও উদয়ন) ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস স্থগিতের নির্দেশনা জারি করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন