বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

পিসিআর থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে না রোগ নির্ণয়ে

এম. মিরাজ হোসাইন, বরিশাল

হেপাটাইটিস বি, জরায়ু ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে অনেকে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। তবে পিসিআর ল্যাবে রোগ নির্ণয়ের নির্দেশনা না থাকায় পরীক্ষার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের কভিড ল্যাবে ২০২০ সালের এপ্রিল স্থাপন করা হয় দুটি পিসিআর মেশিন। কভিড সংক্রমণ কমে গেলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে জটিল রোগ নির্ণয়কারী মেশিন দুটি। শুধু কভিড শনাক্তের জন্য পিসিআর স্থাপন করা হলেও তা দিয়ে হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি, জরায়ু ক্যান্সারসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয় সম্ভব।

মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেবল নির্দেশনা না থাকায় আরটি-পিসিআর মেশিনে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন মেশিন দুটি বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ পিসিআর ল্যাব প্রধান ডা. একেএম আকবর কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতাল থেকে পিসিআর ল্যাবের যেসব পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে, তার সব এখানেই করা সম্ভব। কিন্তু আমরা এখানে পরীক্ষা করব কিনা সে বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা প্রজ্ঞাপন দরকার। পাশাপাশি এর জন্য রিএজেন্ট বাড়তি জনবলের নিশ্চয়তা দরকার।

বরিশালে দুটিসহ সারা দেশে প্রায় ২৫০টি পিসিআর মেশিন একই অবস্থায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বেশি দিন অচল পড়ে থাকলে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের মেশিন দুটি অকার্যকর হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব টেকনোলজিস্ট জয়দেব হালদার বলেন, ‘নমুনা না থাকার কারণে মেডিকেলের ল্যাবে দীর্ঘদিন পিসিআর মেশিন দুটি অলস পড়ে রয়েছে। সরকার চাইলে জটিল রোগ নির্ণয় এখান থেকে করা সম্ভব। মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এর সার্কিট অন্য ডিভাইসগুলো অকার্যকর হয়ে পড়বে।

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তারা নিতান্তই দরিদ্র। বরিশালে ভাইরাসের পরীক্ষা চালু হলে অর্থ সময় দুটোই সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি দ্রুত রোগ নির্ণয় হলে রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে।

ব্যাপারে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলম বলেন, ‘পিসিআর ল্যাবে হেপাটাইটিস সি, বি ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় শুরু হলে রোগীর অর্থ সাশ্রয় হবে। এসব টেস্ট ঢাকা থেকে করিয়ে আনতে ১৫-২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

বরিশাল বিভাগে ঘাতক ভাইরাসগুলোর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে বলে দাবি করে স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদের মতে, ভাইরাস শনাক্ত করা চিকিৎসার মূল মন্ত্র। এটা দ্রুত করা গেলে রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি আশপাশে অন্য কেউ সংক্রমিত আছে কিনা সেটাও নিশ্চিত হওয়া যাবে।

বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বরিশালে উল্লেখযোগ্য হারে হেপাটাইটিস সি, বি ভাইরাস, জরায়ু ক্যান্সার বাড়ছে। সরকারিভাবে কিছু পরীক্ষা চালু রয়েছে বটে, তবে পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা হলে তা হবে উন্নত মানের। এটি চালু হলে এসব রোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা অনেক এগিয়ে যাব।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পিসিআর ল্যাবে এখন পর্যন্ত লাখ ১৬ হাজার কভিডের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সময় প্রায় ২০ হাজার রোগী চিহ্নিত করা হয়। অন্য ভাইরাস পরীক্ষা করতে ল্যাব মেশিন চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দুবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা এলেই তা চালু করা যাবে।

বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. জিএম নাজিমুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পিসিআর মেশিন দিয়ে আরো চারটি পরীক্ষা করা সম্ভব, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আমরা দুবার জানিয়েছি। তারা যদি টেস্ট রেটসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে নকশা করে দেয়, তবে আমরা মেশিন চালু করতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন