অফিসে আসছেন না মহাপরিচালক

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে অচলাবস্থা

মো. হাজিনুর রহমান শাহীন, গাজীপুর

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের (ডিজি) অনুপস্থিতির কারণে করর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক এবং গবেষণা কার্যক্রম। অন্যদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মহাপরিচালকের অপসারণ দাবিতে দুদিন ধরে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

বারি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। এর পর থেকেই দেখা মিলছে না ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকারের। অফিসে না আসায় প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আট শতাধিক বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তিন সহস্রাধিক শ্রমিক এখনো বেতন-ভাতা পাননি। সবার মাঝেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নিয়ম মেনে অফিসে হাজিরা দিলেও কোনো ধরনের কাজ করতে পারছেন না তারা। প্রশাসনিক ও গবেষণা কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এটিএম হাসানুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ডিজি না আসায় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থবির। এখানে এখন কোনো কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে।’

ড. দেবাশীষ সরকার স্বৈচারের মদদপুষ্ট উল্লেখ করে অবিলম্বে তার অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে একজন যোগ্যতম বিজ্ঞানীকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগের দাবি জানান ড. এটিএম হাসানুজ্জামান।

বারির খামার বিভাগের একজন নিয়মিত শ্রমিক হাসান উদ্দিন। তিনি জানান, বারিতে নিয়মিত শ্রমিক রয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এছাড়া গাজীপুরের বাইরে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্টেশনে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। তাদের সবারই বেতন হয় মহাপরিচালকের স্বাক্ষরে। কিন্তু তিনি অফিসে না আসায় কেউই বেতন পাচ্ছেন না।

বারি সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ড. দেবাশীষ সরকার। এ পদে তার মেয়াদ শেষ হলে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি দুই বছরের জন্য পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, যোগদানের পর থেকে তিনি সরকারি বিধিবিধানের কোনো তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগসহ টেন্ডার বাণিজ্য করেছেন। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করলেই বদলিসহ নির্যাতনের শিকার হতে হতো। সর্বশেষ ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য বারির সর্বস্তরের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের খামারবাড়ী সড়ক ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

গতকাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় মহাপরিচালকের অফিস খোলা থাকলেও সেখানে তিনি নেই। ফটকে দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, মহাপরিচালক আসেননি। ৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি অফিসে অনুপস্থিত। কোথায় আছেন বা কবে অফিস করবেন তা জানেন না ওই নিরাপত্তাকর্মী।

পাশেই মহাপরিচালক দপ্তরের পরিচালক ড. এমএম কামরুজ্জামানের অফিস। সেটি খোলা রয়েছে। তিনিও অফিসে নেই ৫ আগস্টের পর থেকে। মহাপরিচালকের পর যিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি হলেন পরিচালক (গবেষণা)। একই ভবনের দ্বিতীয় তলায় তার অফিসে গিয়েও দেখা যায়, চেয়ারটি খালি, তিনি নেই। কোথায় আছেন জানতে চাইলে সেখানকার একজন কর্মচারী জানান, স্যার অফিসে এসেছেন, কিন্তু এখন বাইরে আছেন। তবে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে প্রশাসনিক ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছিলেন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা। বিজ্ঞানী ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ কাজলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মশিউর রহমান শামীম, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্তকর্তা ড. এটিএম হাসানুজ্জামান, ড. সাখাওয়াত হোসেন, ড. মনিরুজ্জামান মিন্টু, ড. আনোয়ার হোসেন খান, জুনায়েদ উন নূর টিটু। সমাবেশে বক্তারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে ড. দেবাশীষ সরকারকে বারির মহাপরিচালকের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান। একই সঙ্গে ইনস্টিটিউটের যোগ্যতম বিজ্ঞানীকে মহাপরিচালক পদে পদায়ন এবং অন্যান্য পরিচালক পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানানো হয়। এছাড়া বারিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পসহ সব পদে নিয়োগ ও পদায়ন বাতিল করে অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের পদায়নের দাবি করা হয়।

তবে এসব বিষয়ে জানতে বারির মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকারের মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন