ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল সার কারখানা

চালুর এক মাসের মাথায় ফের বন্ধ উৎপাদন

নূর আহমদ I সিলেট

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির কারখানা ছবি: সংগৃহীত

চালুর এক মাসের মাথায় ফের বন্ধ হয়ে গেল সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (এসএফসিএল) উৎপাদন। ইউরিয়া সারের অন্যতম কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ না থাকায় গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট থাকায় এসএফসিএলকে গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

জান যায়, শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন শুরু হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। তবে যাত্রার পর থেকে কখনই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমপ্লান্টকে দিয়ে নির্মিত কারখানাটি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বারবার বন্ধ হয় উৎপাদন। সর্বশেষ জালালাবাদ গ্যাসের সঙ্গে দেনা-পাওনা নিয়ে গত ১৩ মার্চ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৭৭৯ কোটি টাকা বকেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির পর গত ২৫ জুলাই থেকে পুনরায় গ্যাস দিতে শুরু করে জালালাবাদ। তবে গ্যাস পেলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদনে যেতে পারেনি এসএফসিএল। সেই ত্রুটি সারিয়ে গত ৬ আগস্ট পুরোপুরি সার উৎপাদন শুরু করা হয়।

উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকেই এসএফসিএল লোকসান গুনছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জিএম (অ্যাকাউন্ট) এসএম আব্দুল বারিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত এসএফসিএল সার বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের পাওনা ছিল ৭৭৯ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে তা দিয়ে গ্যাস কর্তৃপক্ষের সেই পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ লোকসানে রয়েছে কোম্পানিটি। 

এসএফসিএল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ১ হাজার ৭৬০ টন ইউরিয়া উৎপাদন সক্ষম কারখানাটি গড়ে ১ হাজার ৪৫০ টন করে উৎপাদন করতে পারে। পাশাপাশি উপজাত হিসেবে উৎপাদন হয় তরল অ্যামোনিয়া। কিন্তু নানা জটিলতা ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইউরিয়া সার উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্ধ রাখতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। 

ফের উৎপাদন বন্ধ প্রসঙ্গে এসএফসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) গোপাল চন্দ্র ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর ৬ আগস্ট থেকে উৎপাদনে গিয়েছিল কারখানাটি। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আপাতত তারা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখবে। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষও জানায়, ওপরের নির্দেশ রয়েছে তারা গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না। এরপর ওইদিন রাত সাড়ে ৯টা থেকে গ্যাস না পাওয়ায় সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।’ 

কবে নাগাদ পুনরায় চালু হতে পারে তাও বলতে পারছেন বলে জানান ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কারখানাটিতে এখন কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টন সার উৎপাদন হচ্ছিল।’ 

এদিকে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌ. মো. আবু বকর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ওপরের নির্দেশে শাহজালাল সার কারখানায় আপাতত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন