ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ডাকসুর সাবেক নেতাদের সরব-নীরব উপস্থিতি

আনিসুর রহমান

ছবি : বণিক বার্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, সংক্ষেপে ডাকসু। সংগঠনটির সর্বোচ্চ নির্বাচিত প্রতিনিধি সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রায় সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই ডাকসুর সাবেক ও তৎকালীন নেতাদের সক্রিয় ভূমিকা দেখা গেছে। অনেকের নেতৃত্বের বিকাশও ঘটেছিল গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ব্যতিক্রম সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান। 

রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবারের গণ-অভ্যুত্থানে ডাকসুর সাবেক নেতাদের অবস্থান ছিল তাদের বর্তমান নিজ নিজ দলের অবস্থানকেন্দ্রিক। অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে তাদের অনেকটাই এক সুরে কথা বলতে দেখা গেলেও এবার এ প্রবণতা ছিল মিশ্র। এ অভ্যুত্থানে তাদের অনেকেই সরব ভূমিকা রেখেছেন। নিরব ছিলেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ দলীয় অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে এর বিপক্ষেও অবস্থান নিয়েছিলেন। কেউ আছেন আত্মগোপনে। আবার কেউ গ্রেফতারও হয়েছেন।

স্বাধীনতার আগে ১৯৬৩-৬৪ সালে ডাকসুর ভিপি ছিলেন রাশেদ খান মেনন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তার ভূমিকা ছিল অসামান্য। ছাত্র ইউনিয়নের এ সাবেক নেতা বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতিতেও তিনি যুক্ত। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট। সেখানে ১৪ দলের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে থাকার কথা ছিল রাশেদ খান মেননের। যদিও ছাত্রদের পক্ষ থেকে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। 

রাশেদ খান মেনন এখন কারাগারে। ৫ আগস্ট সকালে রাজধানীর আদাবর থানার গার্মেন্ট কর্মী রুবেল হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২২ আগস্ট করা এ মামলায় এখন রিমান্ডে আছেন তিনি। 

রাশেদ খান মেনন ডাকসু ভিপি থাকার সময় জিএস ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। বাম রাজনীতি করে উঠে আসা এ নেত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে-পরে পরিচিতি পেয়েছিলেন অগ্নিকন্যা হিসেবে। জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেও তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনকারীদের কটূক্তি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০২৪ সালের আন্দোলনের সময় তাকে এর পক্ষে-বিপক্ষে কোনো বক্তব্য রাখতে দেখা যায়নি। 

স্বাধীনতা-পরবর্তী ১৯৭২-৭৩ সেশনে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ডাকসুর প্রথম ভিপি হয়েছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আশির দশকের অনেক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ছাত্ররাজনীতি শেষে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নব্বইয়ের দশক থেকে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ ২০১২ সালে সিপিবির দশম কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনো বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত তিনি।

আগস্টের শুরুতে সংবাদমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, এবারের অভ্যুত্থানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ঊনসত্তরের চেয়েও বেশি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘ছাত্রলীগকে উসকে দেয়া’ ও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি। 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সময়ে জিএস ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান। ছাত্ররাজনীতির পাঠ চুকিয়ে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে আশির দশকে পুরোপুরিভাবে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা হন। সাবেক এ ছাত্রনেতা রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় সংগঠন ‘আমরা একাত্তরের’ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভ্যুত্থানে হতাহতদের পক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং কোটা যৌক্তিক সংস্কারের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। 

অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এর চেয়েও অনেক বেশি বৈষম্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রে। তাই আমরা যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। সুতরাং নতুন বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়।’ শুরু থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে সরব ছিলেন দুইবারের ভিপি ও বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সাবেক এ ছাত্রনেতার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে। জাতীয় পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং এর ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। 

সমসাময়িক জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অভ্যুত্থানের আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষ নিয়েছিলেন তিনি। আগস্টের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। যদিও তখনো শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সরকার পতনের এক দফা উত্থাপন করা হয়নি। এছাড়া সে সময় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আন্দোলনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন তিনি। 

এবারের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের ছিল না, সমগ্র জাতির ছিল। সুতরাং এ জাতির একজন হিসেবে আমিও এ আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। তবে ছাত্রদের মতো ফ্রন্টলাইনে কাজ করতে পারিনি। বয়স হয়ে গেছে না! আশা করি যে লক্ষ্যে অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হবে। 

ডাকসুর ১৯৮২ সালের সংসদে নির্বাচিত ভিপি ও দুইবারের জিএস আখতারুজ্জামান। আশির দশকে তৎকালীন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে তৎপর ছিলেন তিনি। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নেতৃত্ব দেন। ওই সময় এরশাদের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০১৬ সালে গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও তিনি এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ আন্দোলনে তাকে তেমন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। তবে গাজীপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। 

১৯৮৯-৯০ সংসদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সাবেক এ ছাত্রনেতা নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক পরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সারির সক্রিয় নেতা ছিলেন। ওই জোটের ব্যানারে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যদিও তার জোট বিতর্কিত ওই নির্বাচনের ফলাফল বর্জন করে; তবে তিনি জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ গ্রহণ করেন। 

এবারের ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। জুলাই-আগস্টে সংকট চলাকালে কোনো মাধ্যমেই কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি তাকে। 

এবারের আন্দোলনে ডাকসুর সাবেক নেতাদের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাহবুবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রতি অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু অনেককেই মানুষের সে প্রত্যাশিত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। বর্তমানে তারা যে দলেরই রাজনীতি করুক না কেন, আশা ছিল ডাকসুর সাবেক নেতা হিসেবে তারা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় তাদের অনেককে পাওয়া যায়নি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একপক্ষীয় নির্বাচনের আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত পাশে থাকেনি। এটি জাতির জন্য একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা। জাতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতা স্মরণে রাখা উচিত ছিল।’ 

১৯৯০-৯১ সংসদে ছাত্রদল থেকে প্রথম ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হন আমানুল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। আমান ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন মেয়াদের বিএনপির আমলে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তার সঙ্গেই জিএস ছিলেন খায়রুল কবির খোকন। তিনি এখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০০৫ সালের উপনির্বাচনে বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতাদের পক্ষে খায়রুল কবির খোকন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের অভিযোগে আমানুল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।

আন্দোলনের দাবির পক্ষে সরব ভূমিকায় ছিলেন ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি নুরুল হক নুরও। ২০১৯ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। বর্তমানে তিনি ছাত্র, যুব ও প্রবাসী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও নিজের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে বড় একটি অংশ তারই নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী। এ আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর পৃথক দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বন্দি অবস্থায় রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতনও করা হয়। 

জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নির্যাতনের ধকল এখনো সামলাতে পারিনি। তবে আফসোস নেই। কেননা, আমরা মুক্তি পেয়েছি। তাছাড়া যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের কাছে আমার এ নির্যাতন কিছুই না।’

নুরের সময়ে জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থেকে নানা ধরনের অন্যায় ও দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অন্যতম বড় অভিযোগ, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কমিশন দাবি করেছিলেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

আন্দোলনে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে গত ১ আগস্ট বণিক বার্তাকে তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের পাশে আছি। আগেও ছিলাম, ভবিষতেও থাকব। আমরা সাবেক নেতারা নিজ নিজ জায়গা থেকে জামায়াত-বিএনপির এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ডাকসু নেতাদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সাবেক ভিপি-জিএসদের একটি অংশ সরকারি দলের নেতা হয়েছেন, তারা সরকারি দলের ভূমিকাকে সমর্থন দিয়েছেন। আরেকটি অংশ ক্ষমতার বাইরে ছিলেন, স্বভাবতই তাদের নিজস্ব দলের অবস্থানেই ছিলেন। শেষের দিকে এসে আমরা দেখলাম তাদের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে একটা অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করছেন। সেটাও মূলত তাদের রাজনৈতিক দলের অবস্থানের মধ্যে থেকে। স্বাধীনভাবে ডাকসুর ভিপি-জিএস হিসেবে কোনো অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলের বাইরে থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদেরও সক্রিয় অবস্থানে দেখা যায়নি।’ 

প্রসঙ্গত, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ভিপি ও জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। সেই থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৬ বছর একটানা হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন ছিল অনিয়মিত। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে আবারো নেতৃত্বশূন্য রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন