গ্যাস উত্তোলনে পরিকল্পনা

১০০ কূপ খননে বাপেক্স একাই করতে চায় ৬৮টি

আবু তাহের

ছবি : বণিক বার্তা

স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে স্থলভাগে ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার। গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত তিনটি বিতরণ কোম্পানির আওতায় এসব গ্যাসকূপ খনন করা হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) একাই ৬৮টি কূপের দায়িত্ব নিতে চায়। তিন বছরের মধ্যে বিপুলসংখ্যক এ কূপ খনন বাপেক্সের একার পক্ষে সম্ভব কিনা তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে এ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানেও রয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা।

দেশে গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা রয়েছে ৩৮০ কোটি ঘনফুট। যদিও জাতীয় গ্রিডে পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো। এ ঘাটতি মেটাতে এবং আমদানিনির্ভরতা কমাতে স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে সরকারের এ সংস্থা। সে লক্ষ্যের অংশ হিসেবে পেট্রোবাংলা স্থানীয় কোম্পানি ও বিভিন্ন দেশী-বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘স্থানীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলা বদ্ধপরিকর। এজন্যই ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, সেখান থেকে অনুমতি পাওয়া গেছে। প্রস্তুতিটা আগেই নেয়া হয়েছে, যাতে অর্থের সংস্থান করা যায় দ্রুত।’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে যে ১০০টি কূপ খনন করা হবে তার মধ্যে ৬৯টি অনুসন্ধান কূপ। বাকি ৩১টি বিদ্যমান কূপের ওয়ার্কওভার করা হবে। এর মধ্যে একাই ৬৮টি কূপ খননের মাধ্যমে বাপেক্স জাতীয় গ্রিডে ২০২৮ সাল নাগাদ দৈনিক আরো ১৩৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস ‍যুক্ত করতে চায়। এ হিসাব বিবেচনায় নিলে বছরে ২২টিরও বেশি কূপ খনন করতে হবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে কাজ করা রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাকে। বাকি ৩২টি কূপ খনন করবে গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (বিজিএফসিএল) ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)।

জানা গেছে, ১০০ কূপ খননে মোট ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করেছে পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) ও কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে বর্তমানে ৪৮টি কূপ খননের প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে বাপেক্স ২২টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, যার মাধ্যমে সংস্থাটি দৈনিক ২৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করতে চায়। যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এ পরিস্থিতিতে পেট্রোবাংলা নতুন করে তিন বছরে ১০০ কূপ খননের যে পরিকল্পনা নিয়েছে সেটিকে উচ্চাভিলাষী বলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর চেয়ে কম লক্ষ্য নিয়ে এগোলে প্রাপ্তিটা আরো বেশি হতো। তাছাড়া বাপেক্সের একার পক্ষে এত স্বল্প সময়ে কূপ খননেরও অভিজ্ঞতা নেই।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাপেক্সের যে সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে বছরে দুটির বেশি কূপ খনন সম্ভব নয়। কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে তাদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হায়ার করতে হবে। তাছাড়া বিপুলসংখ্যক এ কূপ খননে প্রয়োজনীয় রিগ ও লোকবল প্রয়োজন রয়েছে। সেই লোকবল তারা এ সময়ের মধ্যে জোগাড় করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নির্ভর করছে তাদের প্রস্তুতি ও অর্থায়নের ওপর।’

বাপেক্সের তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির কূপ খননের জন্য চারটি রিগ রয়েছে। আর একটি রিগের পুনর্বাসনের কাজ চলমান। বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী দেশের স্থলভাগে প্রতিটি কূপ খননে বাপেক্সের তিন-চার মাস সময় প্রয়োজন। সে হিসেবে নতুন পরিকল্পনায় তিন বছরে সংস্থাটির ১২টির বেশি কূপ খনন করা সম্ভব নয়। 

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শোয়েব বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নিজস্ব রিগ, জনবল ও কারিগরি দক্ষতায় বাপেক্স ৬৮টি কূপ খনন করবে। পেট্রোবাংলার বৃহৎ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দুই বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে বাপেক্সের একার পক্ষে তো আর এত কূপ খননে বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। তাই এসব প্রকল্পে অর্থায়ন সরকার নিজেই করবে। গ্যাস উত্তোলনে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে সেটি পূরণ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।’

জাতীয় গ্রিডে বর্তমানে প্রতিদিন ২৬০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বাপেক্স সরবরাহ করছে সাড়ে ১৪ কোটি ঘনফুট। চলমান ২২টি কূপ খননের প্রকল্প থেকে আরো ২৮ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করার কথা রয়েছে। এছাড়া ৬৮টি কূপ থেকে আরো ১০৭ কোটি ঘনফুট। সব মিলিয়ে ২০২৮ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে বাপেক্সের মোট গ্যাস সরবরাহ লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াবে ১৫০ কোটি ঘনফুট।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন