ছবি: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, সত্য
কারো পক্ষে যাবে, কারো বিপক্ষে যাবে। সত্য যেদিকেই যাবে সেটা মেনে নিতে হবে। কিন্তু
এ সমাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেক জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যাচার হয়। শুধু
আমার রাজনৈতিক চিন্তার পক্ষে গেছে বা যে লোকটিকে আমি রাজনৈতিকভাবে অপছন্দ করি তার বিপক্ষে
গেছে এজন্য যতই মিথ্যা হোক সেটা আমি আরো দশজনকে প্রচার করি। এটি ন্যায়সঙ্গত নয়।
তিনি বলেন, তথ্য যাচাই-বাছাই করা আমাদের দায়িত্ব। সত্য মেনে নেয়ার
দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে, রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে তথ্য বিকৃত করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা
হবে না। আগে অঙ্গীকার করতে হবে আমি যে রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করি না কেন,
তথ্যের জায়গায় আমি নিশ্চিত করতে চাই আমার সততা। সেই তথ্য, যেটা সত্য।
শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের
কনভেনশন হলে পিস অ্যাম্বাসেডরস জাতীয় সম্মেলন ২০২৪-এ সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী
এসব কথা বলেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে তথ্যের
সত্যতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করতে হবে। ভিন্নমত থাকা সমাজের একটা সৌন্দর্য, গণতন্ত্রের
সৌন্দর্য। কিন্তু যেখানে একমত হতে হবে সেটি হচ্ছে, সত্য ও সঠিক তথ্য বলতে হবে। সত্য
আগে স্বীকার করতে হবে। তারপর ভিন্ন মতামত দিতে হবে। তথ্যই যদি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা
হয় এবং এর মাধ্যমে যদি একটা চিন্তা তৈরি করা হয়-এটা ভালো, ওটা খারাপ তাহলে সেটা সমাজে
কারো মঙ্গল বয়ে আনবে না। কাজেই আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে আমরা তথ্যের জায়গায়
সততা নিশ্চিত করব।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের উদ্যোগে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি
ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) সহযোগিতায় এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল
ও ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেক্টোরাল সিস্টেমসের অংশীদারত্বে এ সম্মেলনের আয়োজন
করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে
এমন কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে গেছে ও ঘটানো হয়েছে, যে কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ দাঁড়িয়ে
আছে দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের ওপরে। বাংলাদেশে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের রক্তের ইতিহাস আছে। তার ওপর দিয়ে বিভক্তি ও দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হওয়ার অনেক কারণ
আছে। তবে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দল-মত নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে পেছনে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা প্রয়োজন, ভিন্নমত থাকা
প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা হবে ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা
দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পরিণত হয় যখন নেতিবাচকতা চলে আসে। নিজের সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে,
নিজের শ্রম, মেধা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ব্যক্তি, দলগত এবং গোষ্ঠী পর্যায়ে। যদি আমরা ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ
তৈরি করতে পারি তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বাংলাদেশের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের জন্ম ও আজ এ দেশের এগিয়ে যাওয়া। সেই মূল জায়গায় কোনো আপস চলবে না। যে চেতনা ধরে বাংলাদেশের জন্ম, সেখানে কোনো আপস চলবে না। তার বাইরে আমাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের গোড়ায় গিয়ে দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তি, সে ধরনের উগ্রবাদী কোনো অপশক্তিকে আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে জায়গা
দিতে চাই না। কারণ তারা গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিকে বিনষ্ট করে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপশক্তিগুলোকে বাদ দিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী যোগ করেন, আশা করি আগামী দিনে আমরা পৃথিবীর অন্যান্য
দেশকে দেখিয়ে দিতে পারব যে এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, মতবিরোধ আছে, ভিন্ন মত আছে,
কিন্তু শান্তিও প্রতিষ্ঠিত আছে। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বাইরে আমরা রাজনীতিকে নিতে পারব বলেও
আশা করি। ভিন্নমত, তর্ক-বিতর্ক সবকিছু থাকবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি আমরা তর্ক,
কথার যুদ্ধ করব। আমাদের মধ্যে ভিন্নমতের জায়গা থাকবে, কিন্তু কোনো দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সহিংসতায়
জড়ানো ঠিক হবে না। এগুলো থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা মো. সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন বাংলাদেশে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি শুরু হয়েছে। আমি মনে করি, সমাজে শান্তি
ও সম্প্রীতি বজায় না থাকলে কোনো দেশ বেশি দূর এগোতে পারে না।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমি মনে করি, সমাজকে একতাবদ্ধ করতে হলে এক মঞ্চে আসতে হবে, আলাপ-আলোচনার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দিন দিন আমাদের মধ্যে বিভেদ বেড়ে যাচ্ছে। বৈষম্য বজায় থাকলে সমাজ এগোতে পারে না। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে সমাজে বৈষম্য বাড়তে থাকে। আমি মনে করি, বর্তমানে রাজনৈতিক সংকটের চেয়েও অর্থনৈতিক সংকট বড় সংকট।
