বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি

নর্থ সাউথের পিএইচডিধারী কর্মক্ষেত্রে গেলে সবাই বলবে এটি এনএসইউর পিএইচডি

ছবি : বণিক বার্তা

অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। উপাচার্য, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালুর বিষয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় পিএইচডি গবেষণা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো হয়। তাদের গবেষণা মার্কেট ওরিয়েন্টেড অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি সাধারণ মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল স্ট্যাটাস, চাকরির পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্টএসবের জন্যই যেন পিএইচডি ডিগ্রি। বাস্তব চিত্র তাই বলছে। পিএইচডি গবেষণা আসলে কী কাজে আসছে

পিএইচডি যদি কেউ করেই সেটা কোনো না কোনো কাজে লাগেই, যদি সেটি ভালো মানের পিএইচডি হয়। আর পিএইচডি যদি নামের সঙ্গে লেখার জন্য করে সেই ডিগ্রি কোনো কাজে আসে না। পিএইচডি করার উদ্দেশ্য যদি হয় সমাজে মানসম্মান বাড়বে, চাকরির পদোন্নতিতে সুবিধা হবে তাহলে সেটি ঠিক নয়। যারা পিএইচডি দিচ্ছে এবং যারা নিচ্ছে তাদের উভয়েরই দায়িত্ব আছে। যারা পিএইচডি দিচ্ছে তাদের দায়িত্ব বেশি। দশ হাজার ডলার দিলে আমেরিকার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি সার্টিফিকেট বাঁধাই করে বাড়িতে দিয়ে যাবে। আরেকটু বাড়িয়ে দিলে ওরা আপনার জন্য থিসিস লিখে দেবে। এসব পিএইচডির উদ্দেশ্য অন্য রকম। আর যারা প্রকৃত পিএইচডি করবে তাদের পিএইচডি দেশের কাজে লাগবে। কারণ পিএইচডি কন্ডিশন হলো ইউ মাস্ট এক্সটেন্ড দ্য কারেন্ট স্টেইট অব নলেজ ইন অ্যানি সাবজেক্ট। জ্ঞান যে পর্যন্ত ঠেকে আছে আপনি এর পরের ধাপে নিয়ে যাবেন। যে সমস্যা আগে কেউ সমাধান করেনি আপনি তার সমাধান করবেন। যদি এমন হয় তাহলে পিএইচডি দেশের জন্য কাজে আসছে। আর যারা এটি করেনি কিন্তু স্ট্যাটাস, পজিশন, প্রমোশনের জন্য করেছে এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পিএইচডি, জেনুইন পিএইচডি না।

দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বিভিন্ন ফোরামে পিএইচডি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। উপাচার্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আছে তাদেরই পিএইচডি চালুর অনুমতি দেয়া হোক। সেই সক্ষমতার মানদণ্ড কী?

আমি যদি একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় হই সবাই কিন্তু এটি জানবে। শিক্ষার্থী ভর্তি হবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রিসার্চ রেপুটেশন থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় যে বিষয় হলো পিএইচডি কোয়ালিফায়েড শিক্ষক রয়েছে কিনা। যদি থাকে তাহলে কত শতাংশ লোক পিএইচডি কোয়ালিফায়েড। যারা পিএইচডি কোয়ালিফায়েড আছে তাদের পাবলিকেশন আছে কিনা, রিসার্চ ট্র্যাক রেকর্ড কী এসব দেখতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখি তাহলে হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কত শতাংশ পিএইচডিধারী আছে সেটা দেখা, এর মধ্যে কত শতাংশ নিয়মিত পাবলিশ করে, কত শতাংশ দেশী-বিদেশী রিসার্চ গ্রান্ট পাচ্ছে। এসব বিবেচনায় আমরা বলতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি দেয়ার যোগ্যতা রাখে। এরপর দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোন কোন বিভাগ উইক আর কোনটা স্ট্রং। কে পিএইচডি দিতে সক্ষম। ওই বিভাগের পার কেপিটা রিসার্চ প্রডাক্টিভিটি কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া যে এই বিভাগে গড়ে প্রতি শিক্ষক যদি তিনটা পাবলিকেশন না করে তাহলে বিভাগে আমরা পিএইচডি দেব না। তারপর দেখতে হবে রিসার্চ অ্যাক্টিভ কতজন শিক্ষক আছেন বিভাগে। যোগ্য শিক্ষক, ল্যাব সুবিধা, লাইব্রেরিসবকিছু দেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালু করতে দেব কিনা।  

বাংলাদেশে ভুয়া পিএইচডির ঘটনায় শাস্তির মুখেও পড়েছেন কেউ কেউ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পিএইচডি চালু হলে এর মান রক্ষা হবে কীভাবে?

সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন আছে? ১০০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি অ্যাক্টিভ থাকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হয়তো জানেই না অনেকে। পুরনো যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোর মান সম্পর্কে মানুষের ধারণা আছে। তাছাড়া কিইউএস র‍‍্যাংকিং, টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍‍্যাংকিং যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একরকম না। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি চালুর অনুমতি দেয়া হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এটি সবাইকে দেয়া যাবে না। সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খারাপ নয়, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নয়। আবার সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খারাপ নয়, সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো নয়। বাইনারি একটা ভিউ রয়েছে যে এটি পাবলিক তাই পিএইচডি করতে দাও, তারা আইনমতো ছাত্র নেবে, পিএইচডি দেবে কারো কিছু বলার নেই। কিন্তু যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আসবে তখন বলা হবে নো, নো; পিএইচডি করতে দেয়া যাবে না। এটা তো ঠিক না। যেটা করতে হবে ইউ উইল হ্যাভ ডেফিনেট কন্ডিশন। ক্রাইটেরিয়া যারা পূর্ণ করবে তারাই শুধু পিএইচডি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। সেটা যদি করা হয় তাহলে মান রক্ষা হবে। এনএসইউতে যদি পিএইচডি চালু করি আমি নিশ্চিত করব মাই পিএইচডি হেড অ্যান্ড সোল্ডারস অ্যাবভ আদারস। নর্থ সাউথের পিএইচডিধারী কর্মক্ষেত্রে গেলে সবাই বলবে এটি এনএসইউর পিএইচডি। আমি পাইকারি হারে পিএইচডি দেব না। প্রথম পাঁচ বছরে চারজন লোককে পিএইচডি দিতে পারলেই আমি হ্যাপি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পিএইচডি চালু হয় সেক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

সুপারভাইজারস, কোয়ালিটি প্রফেসরস না হলে কোয়ালিটি পিএইচডি হবে না। একজনের আন্ডারে একজনকে দেয়া যাবে না। একজনের আন্ডারে চারজনকেও দেয়া যাবে না। কিন্তু একজন সুপারভাইজার দুজন অ্যাডভাইজর যদি স্ট্রং হেল্পফুল হয় তাহলে তারা একটি টিম হিসেবে স্টুডেন্টদের ম্যানেজ করতে পারবে। একটা ডিপার্টমেন্ট জাস্ট শুড বি অ্যানাফ। কিন্তু ওই যে তিনটা-চারটা লোক পাওয়া কঠিন।  একেবারে যারা গবেষণার বিষয়ে গাছের গোড়ায় না বরং পাতায় পাতায় ঘোরে, ওই ধরনের লোক আমার দরকার হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এমনিতেই কোয়ালিফায়েড একাডেমিক স্টাফ পাওয়া চ্যালেঞ্জ। এনএসইউতে বিদেশের মাস্টার্স ডিগ্রি ছাড়া কাউকে অ্যাপ্লাই করতে দিই না। তার পরও আমরা  এখন বছরে দুবার করে লোক নিই, আগে তিনবার নিতাম। আমরা হয়তো ১৫০ অ্যাপ্লিকেশন পেলে বড়জোর ৩০-৪০ জনকে শর্ট লিস্ট করতে পারি। লিস্ট থেকে ১০-১৫ জন নিতে পারি। বিদেশে মাস্টার্স, পিএইচডি আছে তার পরও সঠিক লোক পাওয়া যায় না।

ইউজিসি যে খসড়া নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে কোন কোন বিষয় গুরুত্ব দিয়ে নীতিমালা তৈরি করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

নীতিমালার জন্য যেটা দরকার সেটা হলো ইউনিভার্সিটির পরিবেশটা কী রকম, জেনারেল ফ্যাসিলিটি কী রকম। যেমন লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ স্পেস, কাস্টমস। এরপর চিন্তা করা উচিত সবাইকে দেয়া যায় নাকি সিলেকটিভলি দেয়া হবে। ইউজিসি চাইলে এভাবেও বলতে পারে যে আমরা এই এই বিষয় দেখলাম দিজ পারটিকুলার ইউনিভার্সিটি  ক্যান অফার পিএইচডি ইন দিজ সাবজেক্ট দে থিংক দে হ্যাভ দ্য ক্যাপাবিলিটি। তাহলে আমরা ঠিক করতে পারব কোন কোন সাবজেক্টে দেব। যদি তারা আরেকটু গভীরে যেতে চায় ডিটেইল রেগুলেশন করতে চায় তখন তারা বলতে পারে কোন কোন স্কুলে, কোন ডিপার্টমেন্টে দেয়া যায়। তারা ডিসিপ্লিন বলে দেবে। কোনো ইউনিভার্সিটি স্টাডি করে সেখানকার কোন ডিসিপ্লিনে কোয়ালিফায়েড রিসার্চার আছে, পাবলিকেশনস আছে, কোয়ালিফায়েড স্টাফ আছে, সব দেখে তারা স্যাটিসফায়েড হলে অনুমতি দিতে পারে। রিভিউ করতে হবে কিছুদিন পরপর। প্রেশার রাখতে হবে। কন্ডিশন থাকতে হবে। এমন কন্ডিশন হতে পারে যে অ্যাডমিশনে ওই ধরনের ছাত্র না হলে নেয়া যাবে না। কন্ডিশন হতে পারে প্রত্যেকটা সাবজেক্টে যখন কাউকে পিএইচডি দেয়া হবে তখন দুই বা তিনটা অ্যাডভান্স কোর্স করাতে হবে। ডিসিপ্লিনে অ্যাডভান্সড কোর্স করে তাকে আগে একটা স্টেজে আনতে হবে। এরপর এনরোল করা যাবে, তার আগে না। এগুলো করার পরে থিসিস সাবমিট করবে। সেটা অ্যাকসেপ্ট হলে তখন তাকে অনুমতি দেয়া। দেখতে হবে কোয়ালিফায়েড সুপারভাইজারস আছে কিনা। রিসার্চ অ্যাকিটিভ কতগুলো একাডেমিশিয়ান আছে, তার মধ্যে পিএইচডি করতে পারবে ধরনের কতগুলো লোক আছে। কতজন ছাত্রের জন্য কতজন সুপারভাইজার থাকতে হবে। সেটা কন্ডিশন দিয়ে দিতে হবে। আমার মনে হয় ইউজিসি আমাদের সঙ্গে কোনো পর্যায়ে পরামর্শও করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন