উপকূল অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কেন পড়বেন

ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যা মানুষের জীবন সম্পদের ক্ষতির অন্যতম কারণ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত গবেষণার নতুন দুয়ার উন্মোচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের অধীনে ২০১২ সালে দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বর্তমানে ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ নামে পরিচিত। ডিজাস্টার সায়েন্স হলো একটিমাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়, যা প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট পরিবেশের ওপর বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ঘটনার প্রভাব বিশ্লেষণ করে এবং জনবহুল এলাকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিপর্যয়মূলক ঘটনাগুলোর জন্য আপদ চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে দুর্যোগ-পরবর্তী ঘটনাগুলোর ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন করা পর্যন্ত দুর্যোগ চক্রের প্রতিটি উপাদানকে সমন্বিত করে। অন্যদিকে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স হলো জলবায়ু সম্পর্কিত আপদসমূহ মোকাবেলা করার জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্রের সক্ষমতা। এটি ক্রমবর্ধমান গ্রিনহাউজ গ্যাস হ্রাস, জলবায়ুজনিত আপদের ঝুঁকি হ্রাস এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিরসনের একটি বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ। বিভাগের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গবেষণার মাধ্যমে দুর্যোগ জলবায়ু সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর সমাধানে দক্ষ জনবল সৃষ্টি করা।

যেসব কোর্স পড়ানো হয়

জটিল ঝুঁকি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং স্থিতিস্থাপক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ডিজাস্টার সায়েন্স ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের স্নাতক পাঠ্যক্রমে ভূবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান প্রকৌশলকে সমন্বিত করা হয়েছে। চার বছরের পাঠ্যক্রমে ৬১টি কোর্স (১৪৫ ক্রেডিট) রয়েছে, যা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রের প্রতিটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং সাতটি মডিউলে বিভক্ত। মৌলিক দুর্যোগ বিজ্ঞান, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স, টুলস অ্যান্ড টেকনিকস, আপদ শনাক্তকরণ, বিশ্লেষণ মূল্যায়ন, বিপদাপন্নতা মূল্যায়ন ঝুঁকি হ্রাস, সংকট, প্রতিক্রিয়া প্রস্তুতি এবং নীতি, পরিকল্পনা দুর্যোগবিষয়ক আইন। এই ডিগ্রি বিভিন্ন তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক ল্যাব মাঠকর্ম অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়া বিভাগের উন্নত পরীক্ষাগারগুলো ভূ-ঝুঁকি মডেলিং, জলবায়ু পরিবর্তন, জলবিদ্যা, এবং ভূতথ্যবিজ্ঞানে গবেষণা সমর্থন করে, যা দুর্যোগ বিজ্ঞান জলবায়ুবিষয়ক জ্ঞান অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়

প্রাকৃতিক মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশে দুর্যোগ জলবায়ুবিষয়ক পড়াশোনা গবেষণা বাড়ছে, যার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে -বিষয়ক বিভাগ চালু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বিইউপি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতক করার সুযোগ রয়েছে।    

কর্মসংস্থানের সুযোগ

দুর্যোগ বিজ্ঞান একটিমাল্টিডিসিপ্লিনারি বিষয়, যা স্নাতকদের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা, এনজিও, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দুর্যোগ মানবিক জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থায় কাজ করতে পারে। স্নাতকরা জরুরি ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রোগ্রাম কর্মকর্তা, জরুরি প্রতিক্রিয়া কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য অগ্নিনিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে।

ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা তীব্রতা বাড়ছে। দুর্যোগ ঠেকানো না গেলেও উপযুক্ত পদক্ষেপে ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য ডিজাস্টার সায়েন্স ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স স্নাতকদের চাহিদা বাড়ছে, কারণ তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু অভিযোজন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, নীতি নির্ধারণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি কমিয়ে আনতে সক্ষম। তাই জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় তাদের ভূমিকা অপরিসীম।

উচ্চ শিক্ষার সুযোগ

ডিজাস্টার সায়েন্স ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্সে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন বিভিন্ন প্রোগ্রামের সুযোগ রয়েছে। হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, টোকিও, মেলবোর্ন, টরন্টো, লুইজিয়ানা স্টেট, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন, কিয়ুশু এবং কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স, দুর্যোগ এবং পরিবেশবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। প্রোগ্রামগুলো দুর্যোগ জলবায়ুসংক্রান্ত অত্যাধুনিক জ্ঞান দক্ষতা প্রদান করে, যা পেশাগত জীবন, গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

মো. মাহফুজার রহমান: প্রভাষক, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মাহফুজা খন্দকার: রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন