বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যে কারণে পছন্দের শীর্ষে শাবিপ্রবি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছবি: লেখক

স্বাধীনতা-পরবর্তী উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুটি পাতার একটি কুঁড়ির পুণ্যভূমিতে ৩২০ একর জায়গা নিয়ে ২৫ আগস্ট ১৯৮৬ সালে জন্ম নেয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৪ বছরে পা রাখল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভাবন, গবেষণা ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহারে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে।

১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনটি বিভাগে ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। আধুনিক শিক্ষার বিস্তার দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিতে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডসহ সাহিত্য ও বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। শাবিপ্রবির আয়োজিত প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, জাতীয় মহিলা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ইত্যাদি। 

তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে তার দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কি-বোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন ও সর্বশেষ তারবিহীন বৈদ্যুতিক গাড়ি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসএমএসভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে শাবিপ্রবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে এ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রেডিট ট্রান্সফার পদ্ধতিরও যাত্রা শুরু করে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে অংশ নিয়ে ২ হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল ‘টিম অলিক’। দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ‘দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির এগিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে যোগ্যতাসম্পন্ন ও গবেষণাধর্মী শিক্ষক। অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স কর্তৃক প্রকাশিত র‌্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বসেরা গবেষকদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের ২২২ জন শিক্ষক। ২৮টি বিভাগের প্রতিটিই উন্নতমানের ল্যাব সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত। ২০২৪ সালে কিউএস র‌্যাংকিংয়ে দেশের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। সাফল্যের কারণেই বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে  রয়েছে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শাবিপ্রবিকে বিশ্বমানের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এগিয়ে নিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে নিতে সিঙ্গাপুরে আমাদের প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে।’ 

মোফাজ্জল হক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন