বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

শরীরে মেটাল থাকায় কখনই এমআরআই, সিটি স্ক্যান করতে পারব না

ছবি : বণিক বার্তা

১৬ জুলাই থেকেই আমরা বসুন্ধরা গেট, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে আইইউবি, নর্থ সাউথ, এআইইউবির শিক্ষার্থীসহ আশপাশের ইউনিভার্সিটি ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়া শুরু করি। এখানেই আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাই। কারফিউ ঘোষণা ও ইন্টারনেট বন্ধ হলে আমাদের ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে বসুন্ধরা আবাসিকসহ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশপাশের এলাকায় ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। তখন আমাদের বিশালসংখ্যক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান। যেটি ছিল গেম চেঞ্জার। 

সর্বশেষ ৫ আগস্ট স্থানীয় কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে পুলিশ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ করে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিরোধের জন্য এগিয়ে আসে। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ১ নম্বর গেট থেকে মিছিল নিয়ে বসুন্ধরা মেইন গেটের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ নির্বিচারে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। সেখানে আমি হাত, পিঠ ও পায়ে ১১টি রাবার বুলেটে বিদ্ধ হই। টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের প্রভাবে মারাত্মক আহত হয়ে পড়ি। বন্ধুরা আমাকে উদ্ধার করে এনএসইউর মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসা দিলেও তারা রাবার বুলেট বের করার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরবর্তী কয়েক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারাও একই কথা বলেন। শেষে ইবনে সিনা হাসপাতালে দ্রুততার সঙ্গে অধিকাংশ বুলেট বের করে দেয়। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে, রাবার বুলেট বের করার ক্ষেত্রে চেতনা নাশক ব্যবহার করা যায় না। চেতনা নাশক ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে স্কিন কেটে বুলেট বের করার ফলে এখনো তীব্র যন্ত্রণায় ভুগতে হচ্ছে। এখনো হাতে কিছুসংখ্যক বুলেট থেকে যাওয়ায় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, শরীরের ভেতর মেটালের উপস্থিতি থাকায় আমি কখনই এমআরআই, সিটি স্ক্যান করতে পারব না। দীর্ঘদিন যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। আমিসহ এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থীই মানসিক ট্রমায় ভুগছেন।

মুরছালিন মাহমুদ খান

শিক্ষার্থী, বিবিএ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন