আন্দোলনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা

আন্দোলনের স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতায় নিজেকে মেলে ধরতে হবে

আ-আল মামুন

ছবি : বণিক বার্তা

আন্দোলনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয় ছিল। বিশেষ করে জুলাই-পরবর্তী তাদের কাজের স্পিরিট অনেকাংশই বেড়ে গিয়েছিল। তারা প্রোপার নিউজ করার চেষ্টা করেছে। এমনকি আন্দোলনের প্রতি মুহূর্তের ছবি, ভিডিও প্রকাশ করেছে যেটি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবও ফেলেছে।

ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের দুই ধরনের দিক পরিলক্ষিত হয়েছে, প্রথমত প্রশাসনের চাপ আর দ্বিতীয়ত প্রশাসনের হয়েই রিপোর্ট করা। আগে প্রশাসনের চাপের ফলে ভেতরগত কোনো নিউজই করা যেত না। অনেক দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া সত্ত্বেও নিউজ করা যেত না। অন্যদিকে প্রশাসনের হয়েই নিউজ করত, সার্বক্ষণিক ওনাদের প্রশংসাই করা হতো। আন্দোলনের ক্ষেত্রে বলতে গেলে সব মিডিয়াই ভালো ছিল এমন বলা যাবে না, তবে বড় অংশ খুব দ্রুত রেসপন্স করেছিল। জুলাই-পরবর্তী সময়ে প্রতি মুহূর্তে সতর্ক অবস্থানে ছিল, এমনকি খুব ভালো প্রচারও করেছিল। ছোট ছোট ক্লিপ ভিডিও অনেক ভালো ছিল। এমনকি সেসব সংবাদ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে কো-অর্ডিনেশন করতে পেরেছি, আমাদের কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত তাও সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলাম একমাত্র ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের অবদানে। 

আমি ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের বলতে চাই, আগে যেমন বন্দিত্বের মাঝে নিজেকে মনে করত রিপোর্ট করতেও সংকোচ কাজ করত সেগুলো থেকে সরে আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি তুলে ধরা। তাছাড়া বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল সেশন জট, নানান ইস্যু, অভিযোগ নিয়ে কোনো প্রকার ভয়-ভীতি না রেখে সাহসিকতার পরিচয় দেয়া, সাংবাদিকদের শক্তি তুলে ধরা। 

তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, গত ১ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ, ডিবি কর্তৃক সমকাল ও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদের ওপর মারধর, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া এবং আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এটা ভয়াবহ অপরাধ, খুবই খারাপ কাজ করেছে তারা। সমকাল প্রতিনিধি অর্পণ ধর আমাকেও এসে বলছিল স্যার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যেমন টানাহেঁচড়া আচরণ করেছে আমার সঙ্গেও একই আচরণ করেছে। ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিকে কিল ঘুসি দিয়ে তার আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া ডিবি, পুলিশদের এ ধরনের আচরণ, এমন চাপ প্রয়োগ কখনই কাম্য নয়।

এবারের আন্দোলনে আরেকটা বিষয় সাধারণ জনগণের মাঝে লক্ষণীয় যে যমুনা টেলিভিশন বাদে বাকি সব টেলিভিশনকে নিজেদের শত্রু মনে করা। প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে টেলিভিশনগুলোকে যে চাপে রাখা হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ এ আন্দোলনে ফুটে উঠেছে। আসলে বিষয়টি হলো যমুনা টিভি যে অ্যাঙ্গেল থেকে ভিডিও ফুটেজ অথবা নিউজ প্রকাশ করেছে সময় টিভি কিন্তু একই অ্যাঙ্গেল থেকে করেনি। এখানে স্পষ্টত গণমাধ্যমের ওপর সরকারের চাপ। আন্দোলনে বিটিভির অবস্থান কেমন ছিল তা সবারই জানা। এছাড়া আমরা একটি ভিডিওতে দেখেছিলাম সময় টিভির সাংবাদিক পুলিশদের গুলি করতে বলছিল, একটা ফুটেজ নেবে বলে। এটি ঘৃণ্য অপরাধ বলে মনে করছি। তারা ঠিকঠাক রোল প্লে করেনি।

এছাড়া সংবাদমাধ্যমের ওপর দীর্ঘদিনের আক্রোশ রয়েছে এটারও একটা ঐতিহাসিক লিগ্যাসি রয়েছে। সরকারের সঙ্গে মিল রেখে চলা মানুষের ক্ষোভ জমেছে মিডিয়াগুলোর ওপর। অধিকারের যে প্রশ্নটা সেটা। জাতীয় মিডিয়া নিয়ে ক্ষোভ, সরকারের সঙ্গে মিল, জনরোষ, সময় টিভির সাংবাদিক ভিডিও করতে বলা মানুষের ক্ষোভ। আমাদের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের একটা দুর্বলতার বিষয় বলছি—অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা কোন রিপোর্ট কীভাবে কাভার করবে, কোন এঙ্গেল থেকে রিপোর্টটা লিখবে তা সঠিক জানে না, পড়াশোনার অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমাদের শেখানোর মাঝেও গ্যাপ রয়েছে। অফিসে রিপোর্টারদের মাঝেও এ দুর্বলতা রয়েছে। 

এসব বিষয় নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে বেশি বেশি কর্মশালা করে, বিভিন্ন সভা-সেমিনার করেও ঠিকঠাক শেখা উচিত। ক্যাম্পাসে ব্যালান্সড সাংবাদিক হতে হবে, নিজেই ফলাফলে পৌঁছানো যাবে না, দুই পক্ষের মতামত হাজির করতে হবে। সর্বশেষ বলতে চাই, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের আরো সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। ভয় পেলে চলবে না। আন্দোলনের স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতায় নিজেকে মেলে ধরতে হবে।

আ-আল মামুন: অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন