ছাত্র আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছবি: সালাহউদ্দীন রাজু

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতনের দাবিতে রূপ নেয়া এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল বন্ধের পর কার্যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলনকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ আন্দোলনে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী নিহত এবং দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যদিও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন আহত ও নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন প্রথম শুরু হয়েছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গত জুনে। ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করে রায় প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। এ রায়ের পর পরই ৬ জুন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ের শুরুতে আন্দোলন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫ জুলাই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৭ জুলাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগে বাধ্য করা হয় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। এরপর আন্দোলনকে কার্যত টিকিয়ে রাখেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১৮ ও ১৯ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর নজিরবিহীন হামলা চালায় পুলিশ। এদিন ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ, যা এ আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা জানান, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাই তাদের আন্দোলনে নামার পেছনে মুখ্য কারণ ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি বলেন, ‘‌১৫ জুলাই আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তবে এটি বড় আকার ধারণ করে ১৬ জুলাই। আমরা যখন দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে, মেয়েদেরও নির্মমভাবে মেরেছে তখন আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিই। এরপর ১৬ তারিখ আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার পর এ আন্দোলন আরো বড় আকার ধারণ করে এবং ১৭ ও ১৮ জুলাই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ১৮ ও ১৯ জুলাই আমাদের ওপরও নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। এ দুদিন স্থানীয় কাউন্সিলর বাবুল কমিশনার তার কর্মীদের দিয়ে ছররা গুলি ও গুলি ছুড়েছিল।’

১৮ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনা সারা দেশেই আলোড়ন তোলে। এর জেরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনতাও আন্দোলনে যুক্ত হন। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশের গুলিতে অন্তত ২৭ জন মৃত্যুবরণ করেন এবং আহত হন সহস্রাধিক। নিহতদের মধ্যে অন্তত চারজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ঘটনার পর ১৯ জুলাইও আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। এদিন সারা দেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৬৭ জন মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করা হয়। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। 

২৪ জুলাইয়ের পর পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা জানান, এ সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আশপাশের এলাকায় প্রায় নিয়মিতই ব্লক রেইড দেয়া হতো। যাতায়াতের পথে শিক্ষার্থীদের ফোন চেক করা হতো এবং আন্দোলনে যুক্ত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পেলেই তাকে আটক দেখানো হতো। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন শিক্ষকরাও। ২৯ জুলাই থেকে শিক্ষকরা সরাসরি আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে শুরু করেন এবং এর পর থেকেই পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলন আবারো জোরদার হতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সভায়ও ছিল বেসরকারি শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি। সর্বশেষ ৫ আগস্ট লং মার্চ ঘোষণা করা হলে কারফিউ উপেক্ষা করেই জড়ো হন শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্র-জনতা মিলে প্রায় কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। এদিনই দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন