বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তি দিয়ে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর বিস্তারিত তথ্য
চেয়েছে এ সংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি। একই সঙ্গে কম খরচে
উৎপাদিত বিদ্যুৎ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে কিনা সেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে এ সংক্রান্ত
জাতীয় কমিটি। এক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ প্রায় ৯০টির বেশি কোম্পানির বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও
পিডিবির কাছে থাকা তথ্য সাতদিনের মধ্যে জাতীয় কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।
আজ সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর নিকুঞ্জে ইলেকট্রিক সাপ্লাই
কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) বোর্ডরুমে কমিটির আহ্বায়ক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী
এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে
‘ইনডেমনিটি’ (দায়মুক্তি) দিয়ে সম্পাদিত চুক্তিগুলোর বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ কমিটির পরবর্তী বৈঠক আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। আজকের বৈঠকে জ্বালানি সংক্রান্ত
কোনো আলোচনা হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে জ্বালানি বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বিদ্যুৎ খাত সম্পর্কিত
প্রতিটি বিষয়েই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে।
পরে এ কমিটি সরকারের কাছে করণীয় বা সুপারিশ জমা দেবে। এখন পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিই
প্রথম কাজ হিসেবে হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ বিধানের আওতায় চুক্তিবদ্ধ দেশের বিদ্যুৎ
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে তথ্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও পিডিবির
কাছে থাকা তথ্য সাত দিনের মধ্যে জাতীয় কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।
তিনি বলেন, এটি আমাদের কমিটির প্রথম বৈঠক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এ কমিটির
কার্যপরিধি হচ্ছে, যেকোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যেকোনো নথি
নিরীক্ষা করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে
পারবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত
২০২১)-এর আওতায় এরই মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে
কিনা, তা নিরীক্ষা করবে। নিরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন
করবে।
চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান আদানি (ভারতের আদানি গ্রুপ) বিদ্যুতের দাম
উৎপাদন খরচের চেয়ে ৩২ গুণ বেশি চেয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে
চাইলে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক বলেন, বিষয়টি আমরা এখনো পরীক্ষা করিনি। তবে এগুলো দেখা
হবে। কমিটি করা হয়েছে এগুলো পরীক্ষা করার জন্য। আমরা এসব বিষয়ে পরীক্ষা করে তারপর
সরকারকে সুপারিশ করব। ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব সরকারের। আমরা একটি স্বাধীন কমিটি। এ
কমিটি সরকার ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা সেটি
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। আমরা শুধু রিভিউ করব।
বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক
প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরী, কেপিএমজি বাংলাদেশের সাবেক সিওও আলী আশফাক,
ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (এফসিএ), বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট অর্থনীতিবিদ
ড. জাহিদ হোসেন ও ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের
অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি
(বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার লক্ষ্যে
পাঁচ সদস্যের এ জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।