আলোকপাত

সেবা ও সুশাসন সুপ্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় সংস্থার সংস্কার

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর, ব্যাংক বা আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের, পুঁজিবাজারের দায়িত্ব যেমন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ কমিশনের, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব দুর্নীতি কমিশনের, রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রকারান্তরে প্রজাতন্ত্রের হিসাব ও নিরীক্ষা, লোকবল নিয়োগ, নির্বাচন পরিচালনা এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য রয়েছে চারটি সাংবিধানিক সংস্থা। এরা সবাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হতে হয়, কেননা সরকার ও রাষ্ট্র এক নয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে সরকার তবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, অধিকার ও দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে অধিগ্রহণ করতে পারে না। অর্থাৎ সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে খবরদারি নিয়ন্ত্রণের প্রতিভূ বা ক্ষমতা ব্যবহারের হাতিয়ার বানাতে পারে না, বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে এটা স্বতঃসিদ্ধ প্রথা। এর ব্যতিক্রম ঘটলে সরকার ও রাষ্ট্র উভয়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে এবং একে অন্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং তাতে দেশ, সমাজ ও অর্থনীতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রাষ্ট্র ও সরকার অবশ্যই পরস্পরের পরিপূরক, তবে তারা পরস্পরের মধ্যে দ্রবীভূত হতে পারবে না। একজন দলীয়ভাবে নির্বাচিত বা মনোনীত মন্ত্রী, সরকারপ্রধান অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী বা এমনকি রাষ্ট্রপতিও যখন শপথ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন, তখন তাকে হতে হবে দলমত নির্বিশেষে সবার। তিনি তখন ‘রাগ কিংবা অনুরাগের বশবর্তী হয়ে’ তার দল, চ্যালা, ক্যাডার কিংবা বিরোধী দল কারোরই প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারেন না। একজন মন্ত্রী তার দলের মুখপাত্র হতে পারেন না, দলের হয়ে কাজ করতে হলে তার মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়। এর ব্যত্যয় মানেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারের স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ বা প্রয়োজনীয়তার উদ্ভব হয়। এটা চরম সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকতা শুধু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উগ্রবাদিতা সুলভ হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির হেতুর মধ্যে সীমিত নয়। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ভেদবুদ্ধিগত স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে জনগণকে মৌলিক অধিকারবঞ্চিত করা, প্রতারিত ও প্রতিপক্ষ বানানোটাই চরম সাম্প্রদায়িকতা। বয়ানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ফুলঝুড়ি, অথচ বিশ্বাসে ও কাজে সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ ৫৩ বছর বয়সী বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যমান বৈষম্য বিবরে। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে দলমত-সরকার নির্বিশেষে, অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সংস্থা হিসেবে রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে। সুতরাং স্থানীয় নিরাপত্তা চৌকি যখন দেখবে তার এলাকায় রাষ্ট্রের নাগরিকের (যাদের রয়েছে নিরাপত্তালাভের মৌলিক অধিকার) নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, দলমত-সরকার নির্বিশেষে সবাইকে সমনিরাপত্তা বিধান করা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পর্যায়ে পড়বে। কোনো এলাকায় কেউ খুন হলে রাষ্ট্রের পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বাদী হয়ে ব্যবস্থা নেবে। সেখানে সরকারের হুকুমমতো সরকারি দল তথা খোদ সরকারের পক্ষালম্বন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নয়। সরকার যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচিত, গঠিত এবং রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি নিজের রাষ্ট্রীয় পরিচয় ভুলে সরকারি মনোভাব, মতাদর্শের লেবাস পরে আচরণ করে তাহলে সে তার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে বরখেলাপ করছে বলে আইনত দণ্ডনীয় হবে। কেননা তাকে মানতে হবে যে সরকার আসবে যাবে কিন্তু রাষ্ট্র স্থায়ী এবং রাষ্ট্রের কর্মচারীও স্থায়ী এবং সরকার নির্বিশেষে সে তার নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে। এটা অনুসৃত না হলে নানা বিবাদ-সংবাদ বঞ্চনা-বৈষম্যের প্রশ্ন উঠবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদা দায়িত্ববোধ ক্ষুণ্ন হবে এবং প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের নাগরিকরা (এমনকি সে নিজেও) নানাভাবে বঞ্চিত হবে মৌলিক অধিকার তথা নিরাপত্তার নিশ্চিত প্রাপ্তি থেকে। আজকাল প্রায়ই দেখা যায়, এলাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে পুলিশ তার নিরপেক্ষতার পোশাক খুলে সাদা পোশাকে দিব্যি কারো না কারো পক্ষাবলম্বনে নেমে পড়ে। আবার কখনো সে বসে থাকে, কেউ তার কাছে অভিযোগ করলে তার ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে অন্যায়কারী ক্ষতি সাধনে সুযোগ পায়, অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ বা কুক্ষিগত করার সুযোগ পায়। অথচ পুলিশের দায়িত্ব ছিল কোনো ঘটনা-দুর্ঘটনায় নিজেকে না জড়িয়ে বরং নিজে সুয়োমটো ব্যবস্থা নেবে। সে যদি মনে করে বিবদমান দুপক্ষের কেউ এসে আমাকে না বললে, অভিযোগ সম্পর্কে অভিযোগ দায়ের না করলে সে অগ্রসর হবে না, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতেই থাকবে এবং এমনকি একসময় তার নিজের পায়ের তলার মাটিও থাকবে না। তাকে তার ভূমিকা সম্পর্কে সজাগ ও দায়িত্বশীল থেকে নিজের থেকে অরাজকতা বাদ-বিসংবাদ, প্রতিবাদ-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে নিজের ক্ষমতা (আইনগত, প্রশাসনিক, শৃঙ্খলাজনিত) প্রয়োগে তাকে দায়িত্বশীল হতে হবে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে প্রায় অনুযোগ-অপারগতার কথা ওঠে এই বলে যে দুর্নীতি দমনের কাজে তাদের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া নেই কিংবা তার কাজে অন্যরা সহযোগিতার পরিবর্তে খবরদারি করে। দুর্নীতি করে টাকা বা সম্পদ লোপাট করার পর কোনো অভিযোগ দুদকে জমা পড়লে ওই দুর্নীতি দমনের কাজ শুরু করা হয়। দুর্নীতির পোস্টমর্টেম করার সময় দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না, খুঁজে পেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এগিয়ে আসে না। আদালত পর্যন্ত গড়ায় সামান্য কয়েকটি কেস। সেখানে দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপারে দুদকের তৎপরতাকে দায়ী করা হয়। দুদকে বিশেষ কাউকে ধরার জন্য যাবতীয় ধনমান ব্যয় করতে কসুর করে না, পক্ষান্তরে কারো কারো নামে আনা অভিযোগ থেকে তাকে দায়মুক্তি দিতে কসুর করে না। জনমনে এটা প্রতীয়মান হয় যে এক যাত্রায় দুই ফল এবং সংশয়-সন্দেহ তৈরি হয়—দুদক এসব করছে কারো না কারোর তথা সরকারের অঙ্গুলি হেলনে। এ ধারণা জন্মানোর জন্য, ক্ষমতাসীনের পরামর্শ ও পক্ষাবলম্বনের কারণে দুদকের প্রতি গণ-আস্থা দোদুল্যমান হওয়াটা দুদকের জন্য আত্মঘাতী। 

দুদক আদালতে যে মামলা দায়ের করে, আদালতে তা সহজে নিষ্পত্তি হয় না। বিচারিক আদালত তথ্য-প্রমাণ-বিশ্লেষণ করে রায় দেন। তথ্য-প্রমাণ হাজির করার ক্ষেত্রে দুদক কেস টু কেস সীমাবদ্ধতা কিংবা অতি আগ্রহের বশে ব্যাপক প্রমাণাদি হাজির করার ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারে না। পুরো প্রক্রিয়াটি এমনভাবে সাজানো হয় যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ কেউ সরাসরি তুলতেও পারে না।

নির্বাচন কমিশন সরকারের পরোক্ষ ও নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকারের সহযোগিতার পরিবর্তে সরাসরি হস্তক্ষেপের নিদর্শন দেশে ও বিদেশে পাওয়া যায়। পুরো প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষকরণের দাবিতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি হাঙ্গামা হয়েছে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উঠেছে এমনকি ওয়ান ইলেভেনের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার গতিপথও রুদ্ধ বা পরিবর্তিত হয়েছে। দেখা যায়, এক সময় যারা তত্ত্বাবধায়ক তথা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি তুলেছে, তার থেকে সুবিধা পেয়েছে তারাই আবার ক্ষমতাসীন হয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি যেন মহাভারত অশুদ্ধ প্রতিপন্ন করতে মরিয়া। বাংলাদেশে গত পাঁচ দশকে ১২টি সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে কমবেশি যে সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রীয় ভূমিকা পালনে ব্যর্থতার বিতর্ক সৃষ্টির সূত্রপাত ঘটিয়েই। এখানে রাষ্ট্র বনাম সরকারের বিরোধে পক্ষপাতিত্ব, অপারগতা, অদক্ষতা ও অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও যে যথা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না, ১৯৯৩ সালে সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ-যাবৎ সরকারপুষ্ট শক্তিশালী পক্ষ পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণের হিম্মত বা সমস্যা সৃষ্টিকারকের ভূমিকায় রয়েছে বা ছিল এ কথা বলা বাহুল্য। ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের আওতায় দুটি এক্সচেঞ্জে মালিকানা পরিবর্তন করে ‘সুশাসন ও জবাবদিহিতা’ নিশ্চিত করার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মালিকানা পরিবর্তন ঘটানো হয়। কিন্তু সেখানেও স্বাধীন পরিচালকদেরকেই বিএসইসি থেকে ২০১৪-১৬ সালে যেভাবে নিয়ন্ত্রণের মহড়া চালানো হয়, এখনো পরিচালক মনোনয়ন এবং তাদের কর্মধারার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের নজির হরহামেশা চলছে। দুর্বল কোম্পানিকে বাজারে পুনর্বাসনের নামে পুঁজিবাজারকে পঙ্গু করা অব্যাহত রয়েছে। কমিশনকে দলীয়করণ করতে গিয়ে কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতাকে দুর্বল ও নিরুদ্দেশ যাত্রী করা হয়েছে। নিজ দেশে বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত করেও ক্ষান্ত না হয়ে বিদেশী বিনিয়োগ আহ্বান করতে লাখ কোটি ডলার ব্যয়ে রোড শো করে বিসেক। সাম্প্রতিককালে সরকার পতনের আগের দিনও বিশেষ ব্যক্তিকে অস্বাভাবিক সুবিধা উজাড় করে দেয়া হয়েছে। সরকারি ক্ষমতাধরের প্রতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিসেকের এ আদিখেত্যা দেখানো ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজিবাজারকে শেষ করার শেষ পেরেক এবং লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিদারুণ রসিকতা। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেটরি ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জাগে, যখন পাঁচ-ছয়টি ব্যাংক একটি গ্রুপকে কুক্ষিগতকরণে পদ্ধতি প্রক্রিয়ায় মালিকানা হস্তান্তরে বাংলাদেশ বাংকের নিষ্ক্রিয়তা শুধু নয় বরং ক্ষেত্রভেদে পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যাংকের টাকা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লোপাট ও পাচার হওয়ার ক্ষেত্রে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিকলাঙ্গ ভূমিকায় আর্থিক খাত আজ মারাত্মক ঝুঁকি বা হুমকির মধ্যে। উচ্চ আদালত থেকে একবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুদককে একটি সিন্ডিকেট গ্রুপের ঋণ কার্যক্রম সুয়োমটো তদন্তের নির্দেশ দিয়ে পরক্ষণে আবার সেই তদন্ত প্রত্যাহারের নির্দেশনাও দেয়া হয়। আদালত একবার মনে করেছেন অন্যায়-অনিয়ম, আর্থিক লুটপাটে ব্যাংক খাতের পুরো দর্শনকে উল্টিয়ে দেয়া হয়েছে, পরক্ষণে তারা বলছেন তদন্ত হলে স্বনামধন্য গ্রুপ কোম্পানির সুনাম (মৌলিক অধিকার) নষ্ট হবে। অথচ এর ফলে সৎ ব্যবসা, দায়িত্বশীল ব্যাংক ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। সেই একই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংক একদিকে বলছে ব্যাংকগুলোয় সংকট নেই, ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, অন্যদিকে বড় বড় সিন্ডিকেট গং হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের স্বার্থে নোট ছাপিয়ে তাদের ব্যাংকে তহবিল সরবরাহ করা হয়েছে, মুদ্রানীতির নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। মুদ্রাস্ফীতির কারণ সৃষ্টিকারী কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিজেই ফতোয়া জারি করে চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন এক কর্তাব্যক্তি গোটা ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে পঙ্গু করেছেন। কারা বা কাদের ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া—হ্যাকিং করে বিপুল পরিমাণ ডলার চুরি করার ব্যাপারে দায়দায়িত্বহীনদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত গৃহীত না হওয়ায় ব্যাংক খাতের দেউলিয়াপনা ধরা পড়ছে, ব্যাংকিংয়ের ভূমিকাও নড়বড়ে হয়েছে। সরকারের প্রচ্ছন্ন ইন্ধন/পরিকল্পনাকারীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে—এরই মধ্যে ব্যাংক খাতে এ ক্ষরণের জন্য সরকারের দায়িত্বশীল মহল দায় এড়াতে পারেন না। বছর তিনেক আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায়ও ব্যাংক কমিশনের কথা বলেছিলেন। এরই মধ্যে সেই কমিশনের কথা সম্পূর্ণ বেমালুম এড়িয়ে চলতে সক্ষম হয়েছিল সদ্য বিদায়ী কর্তৃপক্ষ। 

ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম বোর্ড, এনএসআই, ভূমি অফিস, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয়’ত্ব হারিয়ে দলীয় সংকীর্ণ সংস্থায় রূপান্তরিত হয়ে সেবা-পরিষেবা, জনসেবা সবই বৈষম্যের শিকার হয়েছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শানে নজুল সেখানেই। 

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: চেয়ারম্যান, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) ও সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন