বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং

স্বাস্থ্যসেবায় বুয়েট বিএমইর চার উদ্ভাবন

ছবি : বণিক বার্তা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় ব্যায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএমই) বিভাগ। মাত্র সাড়ে আট বছর সময়। এর মধ্যে ক্লাসরুম ও বৈজ্ঞানিক ল্যাবসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সরঞ্জাম নির্মাণে পেরিয়েছে আরো বছর তিনেক। সে হিসেবে মাত্র চার-পাঁচ বছরে বেশকিছু মৌলিক উদ্ভাবন উপহার দেয়াসহ প্রায় এক ডজন উদ্ভাবনের উন্নতি সাধন করেছেন এ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিভাগটির চারটি মৌলিক উদ্ভাবনের কথা জানাচ্ছেন আনিসুর রহমান

হেমোস্টেট পাউডার বা রক্তজমাটকরণ পাউডার

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর সংখ্যা নেহাতই কম নয়। ক্ষতস্থানের অতিরিক্ত রক্তপ্রবাহে মানুষের মৃত্যুর হার হৃদরোগ আর ক্যান্সারে মৃত্যুহারের কাছাকাছি। গভীর ক্ষতের ফলে রক্তক্ষরণ হলে শরীরের ন্যাচারাল হিমোস্ট্যাসিস বা স্বাভাবিক রক্তজমাট প্রক্রিয়া সেক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে বুয়েটের বিএমই ল্যাবে তৈরি করা হয়েছে হিমোস্ট্যাট পাউডার। ক্ষত স্থান থেকে অস্বাভাবিক এ রক্তপ্রবাহ বন্ধে যা এরই মধ্যে ফলপ্রসূ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। উদ্ভাবনটি সুপরিচিত কমার্শিয়াল হিমোস্ট্যাট পদার্থের তুলনায় অ্যানিমেল স্টাডিতে লক্ষণীয় ভালো রেজাল্ট দেখিয়েছে। বাজারের অন্যান্য হিমোস্ট্যাট পদার্থের তুলনায় এ হিমোস্ট্যাট পদার্থের পার্থক্য হলো এটিতে শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ রয়েছে এবং এরই মধ্যে কয়েক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা পেয়েছে।

অক্সিজেট 

করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কভিড-১৯ মহামারীকালে যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। মহামারীকালে অক্সিজেনের অভাবে যখন কাতারে কাতারে মানুষের মৃত্যু হচ্ছিল ঠিক তখনই সময়ের চাহিদা বিবেচনায় ‘‌অক্সিজেট’ উদ্ভাবন করেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মেডিকেলে ডিভাইসটির সাহায্যে কোনো প্রকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়াই রোগীদের অক্সিজেনসমৃদ্ধ উচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করা যায়। এটি সূক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভালভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণ তৈরি করে মিনিটে ৬০ লিটার গতিতে উচ্চ প্রবাহ সরবরাহ করতে সক্ষম।

ন্যানোপার্টিক্যাল

চোখের খুব সাধারণ দুটি রোগ কনজাংটিভাইটিস ও ড্রাই আই সমস্যা, যা সমাধানে ন্যানোপার্টিক্যাল প্রস্তুত করেছে বিভাগটির ‘‌বায়োইনোভেশন রিসার্চ গ্রুপ’। চক্ষুবিজ্ঞানের কল্যাণে গবেষণার অংশ হিসেবে এ ন্যানোপার্টিক্যালটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে আইড্রপের মধ্যে একই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ড্রাগ সমন্বয় করা হয়েছে। ন্যানোপার্টিক্যাল আইড্রপ ল্যাবের অ্যানালাইসিসের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে অ্যানিমেল মডেলে (ইঁদুর ও খরগোশ) সাফল্য পেয়েছে। যা বাজারে প্রাপ্ত আইড্রপের তুলনায় দ্রুত রোগ প্রতিকারে কার্যকর। গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায়, ন্যানোপার্টিক্যালকে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের ফলে চোখের ড্রপের ওষুধ প্রচলিত আইড্রপের তুলনায় দীর্ঘক্ষণ ধরে চোখেই থাকছে। ওষুধ অপচয় কম হচ্ছে এবং ঘন ঘন প্রয়োগ করার ভোগান্তি কমছে।

অ্যাডভান্সড ড্রেসিং

ডায়াবেটিক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত ক্ষত নিরাময়ে উন্নত ড্রেসিং নিয়ে গবেষণা করছেন বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এই ড্রেসিংয়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড লোড করা ন্যানোফাইবার ব্যবহার করা হয়েছে। যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর। এ ন্যানোফাইবার ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে ক্ষতস্থানে ক্রমাগত ও নিয়ন্ত্রিত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষত নিরাময় সমস্যার সমাধানের জন্য প্লেটলেট-রিচ প্লাজমা (পিআরপি) লাইসেটভিত্তিক ড্রেসিংয়েও তৈরি করা হচ্ছে। যা রক্তের অণুচক্রিকা থেকে প্রাপ্ত গ্রোথ ফ্যাক্টর দ্বারা ক্ষত দ্রুত নিরাময়ে সাহায্য করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন