উপকূল অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

পৃথিবীতে উপকূলসংক্রান্ত ব্যাচেলর ডিগ্রি আমরাই শুরু করি

ছবি : বণিক বার্তা

ড. হাফিজ আশরাফুল হক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা বিভাগীয় প্রধান। এ বিভাগের কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নে প্রধান ভূমিকা রাখেন তিনি। সম্প্রতি বিভাগটির নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উপকূল অধ্যয়নবিষয়ক বিভাগের যাত্রা শুরুর গল্পটি জানতে চাই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ থাকার পরও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগ খোলার অনুমতি দেয় ইউজিসি। কিন্তু সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক অনুমোদিত পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের পরিবর্তে উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বিভাগ খোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ওই সময়ে আমি মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এক বিকালে তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে এ বিভাগের ইতিহাস বিবৃত করে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এবং কোর্স কারিকুলাম প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করেন। পরবর্তী সময়ে অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ও ড. রেজাউর রহমান স্যারের দিকনির্দেশনায় আমি কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করি। ২০১৬  সালে কোস্টালসংক্রান্ত কোনো বিএসসি কোর্স আমার জানামতে পৃথিবীর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অফার করেনি।

অঞ্চলভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভৌগোলিক অবস্থান ও আর্থসামাজিক অবস্থার বিবেচনায় নতুন সাবজেক্ট চালু করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? 

আঞ্চলিকতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি সাংঘর্ষিক। আর বাংলাদেশের মতো একটি দেশে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষার নামে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশের মডেল অনুসরণ করে শিক্ষার বিষয়টি ডেভেলপ করা হচ্ছে না। ভৌগোলিক অবস্থান ও আর্থসামাজিক বিবেচনায় অ্যাপ্লাইড সাবজেক্টগুলো সেই এলাকার উন্নয়নে তখনই ভূমিকা রাখতে পারবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গবেষণা প্রাধান্য পেয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ সংস্কৃতি বিদ্যমান নয়। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সংস্কৃতি তৈরিতে প্রধান অন্তরায় বলে মনে করি।

উপকূলীয় অঞ্চল বিবেচনায়ই কি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এ বিভাগ চালু করা হয়? 

উপকূলের রিসোর্স, সমস্যা, সম্ভাবনা ও দুর্যোগকে ফোকাস করে কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কারিকুলাম প্রণীত হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয় যে এটি শুধু উপকূলবিষয়ক কারিকুলাম। ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স কিংবা এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগগুলোর সঙ্গে উপকূল প্রকৌশল ও হারবার প্রকৌশল, সমুদ্রবিজ্ঞান ও ব্লু ইকোনমির কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয় হচ্ছে এ বিভাগ।

এ বিভাগে কী কী কোর্স পড়ানো হয়?

উপকূল প্রকৌশল, হারবার প্রকৌশল, সমুদ্রবিজ্ঞান, ডিজাস্টার সায়েন্স, আবহাওয়াবিদ্যা, পরিবেশবিজ্ঞান, রিসার্চ মেথডোলজি, ব্লু ইকোনমি, সয়েল ম্যাকানিকস, ম্যাথস, স্ট্যাটিস্টিক, ভূতত্ত্ব, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, নিউমেরিক্যাল মডেলিং অ্যান্ড সিমুলেশন, ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডাপটেশন প্রভৃতি।

কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন। কোথায় ক্যারিয়ার গড়বেন শিক্ষার্থীরা?

পৃথিবীর বুকে কোস্টালসংক্রান্ত ব্যাচেলর অনার্স ডিগ্রি আমরা শুরু করি। ওপরে উল্লেখিত সব ডিসিপ্লিনে শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার গড়তে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন এনজিওতে চাকরি করতে পারবেন। কেউ বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শেষে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের দেশে অপার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলের জনগোষ্ঠী। তারা কীভাবে এ বিভাগের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে?

বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব হ্রাস এবং অ্যাডাপটেশনের গবেষণা এ বিভাগের অন্যতম বিশেষত্ব। যার সুফল উপকূলের জনগণ সরাসরি ভোগ করবে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার প্রধানতম বিষয় উপকূল। উপকূলের জনগোষ্ঠীকে কীভাবে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দুর‍্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যায় সে লক্ষ্যে চলেছে আমাদের অনন্তর গবেষণা ও নিরন্তর প্রচেষ্টা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন