পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাগরকন্যার জ্ঞানসূর্য

ছবি : বণিক বার্তা

আধুনিক শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ প্রদান ও যোগ্য উদ্যোক্তা তৈরির অভিলক্ষ নিয়ে পটুয়াখালী জেলার দুমকিতে ২০০০ সালের ৮ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের শিক্ষা ও গবেষণায় রেখে চলছে কৃতিত্বের সাক্ষর। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের তথ্যমতে, ২০১৫ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৮০১টি গবেষণা প্রকল্প বরাদ্দ করা হয় এবং সবক’টি গবেষণা প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে নিজস্ব ও সরকারি অর্থায়নে ২০২২-২৩ বর্ষে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প ১৫৩টি। চলুন জেনে নিই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়া জাগানো বেশকিছু সফল গবেষণা প্রকল্প নিয়ে।

বায়োচার প্রযুক্তি: পবিপ্রবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. শামীম মিয়া তিন বছর দীর্ঘ গবেষণার পর ২০১৪ সালে বায়োচার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সক্ষম হন। তিনি বর্তমানে বায়োচার প্রযুক্তির উন্নয়নে বেশ কয়েকজন স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বায়োচার প্রযুক্তি নিয়ে অ্যাডভান্স কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (এসিআই) ও পবিপ্রবির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

দেশের প্রথম ও একমাত্র জলহস্তী কঙ্কাল: বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমানের তত্ত্বাবধানে একদল শিক্ষার্থী জলহস্তীর হাড় জুড়ে একটি কঙ্কাল প্রস্তুত করেছেন। ১১ মাস সময় নিয়ে তৈরি কঙ্কালটি দেশের প্রথম ও একমাত্র জলহস্তী কঙ্কাল। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘‌রংপুর চিড়িয়াখানায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় লিওন নামে জলহস্তীটির।’

পাঁচ শতাধিক ধানের গবেষণা ও জার্মপ্লাজম: দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশীয় ধানের গুণগত মান সংরক্ষণ ও এর জিনগত উন্নয়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। বর্তমানে পাঁচ শতাধিক জার্মপ্লাজম নিয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ সংগ্রহশালায় ১০০টি দেশীয় জাতের পাঁচ শতাধিক রকমের ধানের জার্মপ্লাজম রয়েছে। 

ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষে প্রযুক্তি উদ্ভাবন: ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আসাদুল হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষে একটি নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে। “ফট্রিপ মেথড” নামক এ পদ্ধতির মাধ্যমে সাধারণের চেয়ে ২২-২৫ শতাংশ বেশী উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।

ফলের জাত উদ্ভাবন: বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহত্তর জার্মপ্লাজম এরই মধ্যে সফলতার স্বাক্ষর বহন করছে। জার্মপ্লাজমটি স্থানীয় ফলমূল ও বৃক্ষের জিনগত উন্নতি সাধনে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছে। 

লবণাক্ততা ও জলামগ্নতাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন: দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির অন্যতম অন্তরায় হলো মাটির লবণাক্ততা। এ সমস্যা সমাধানে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল সাহা ও অধ্যাপক ড. শামীম মিয়ার যৌথ গবেষণায় লালমোটা, সাদামোটা অথবা সাক্ষ্মরখোরার মতো  স্থানীয় ধানের জাতের সঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নত জাতের ধান উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ গবেষণার ফলে সমগ্র দেশের কৃষিতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মারসিফুল আলম রিমন: শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন