বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিদেশী শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে

শফিকুল ইসলাম

ছবি : বণিক বার্তা

বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে ব্যতিক্রমী এক ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন ৬৭০ জন বিদেশী শিক্ষার্থী। শুধু ছয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছেন বিদেশী শিক্ষার্থীর অর্ধেক। দেশে মোট ১৩টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে একাডেমিক কার্যক্রম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৪ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন ৩৪০ জন বিদেশী শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান, ভারত থেকে আসা। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১৭ জন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সর্বোচ্চ ১৯১ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন, যা একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যায় সর্বোচ্চ। 

তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সবচেয়ে পুরনো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী নেই। 

যবিপ্রবির বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নেপালের সুরেশ চাউলাগাইন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু নেপালে প্রচুর টাকা লাগে। আমি মেডিকেল পরীক্ষায় পাস করেও টাকার জন্য পড়তে পারিনি। আমার বাবা সামান্য কৃষক। বাংলাদেশের এ বিশ্ববিদ্যালয় ভালো র‍্যাংকিংয়ে এবং রিসার্চে ভালো আছে দেখে ভর্তি হই। আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কম, তারপর ‌আসন পাওয়া যায় না। পেলেও টাকা দিয়ে পড়তে হবে। এখানের নতুন ভাষা, পরিবেশ, সংস্কৃতি বাইরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সুবিধা। যবিপ্রবির সবার ভালোবাসায় আমি ধন্য।’ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ বিদেশী শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি সব সাংস্কৃতিক ও গবেষণা কর্যক্রমে সমানভাবে অংশগ্রহণ করছেন। নেপাল থেকে আসা কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী বীরেন্দ্র কুমার যাদব বলেন, ‘‌বাংলাদেশের মতো নেপালও একটি কৃষিপ্রধান দেশ। তাই ছোট থেকেই কৃষির প্রতি আমার আগ্রহ রয়েছে। আর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠায় পবিপ্রবি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি আমরা যারা বিদেশ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি তাদের আবাসিক সুবিধা থেকে শুরু করে এখানকার উন্মুক্ত গবেষণার সুযোগ তথা সবকিছুই আমাদের এখানে আসতে আগ্রহী করেছে।’

বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য এ কিউ এম মাহবুব বলেন, ‘‌সার্কভুক্ত দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান থেকেই বেশি শিক্ষার্থী এ দেশে পড়তে আসেন। নেপালে পড়াশোনার খরচ বেশি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী নেপাল থেকে আসে। বশেমুরবিপ্রবির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীই নেপালি। ভারত বাংলাদেশের থেকে শিক্ষায় এগিয়ে থাকলেও অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী এ দেশে পড়তে আসেন। মূলত পড়াশোনার খরচ কম হওয়ায় বিদেশীরা পড়তে আসেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন