বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় এলওআর ও এসওপি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় রিকমেন্ডেশন লেটারের খুঁটিনাটি

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ছবি: সংগৃহীত

রিকমেন্ডেশন লেটার রেফারেন্স লেটার নামেও পরিচিত। বিদেশে স্কলারশিপ বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আবেদন করার জন্য অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র এই লেটার। এই একটি লেটার এনে দিতে আপনার জন্যে প্রেস্টিজিয়াস কোনো স্কলারশিপ। আপনি ছাত্র হিসেবে কেমন ছিলেন কিংবা পেশাগত জীবনে কেমন, আপনার গবেষণার দক্ষতা কতটুকু, আপনার সফট বা হার্ড স্কিল কী কী আছে যেগুলো দ্বারা একটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ডিপার্টমেন্ট মনে করবে আপনাকে অ্যাডমিশন দেয়াটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়ে থাকে। অ্যাডমিশন কমিটি এটা দেখে বুঝবে আপনাকে তারা অ্যাডমিশন কিংবা স্কলারশিপ দেবে কিনা। এমনকি সিজিপিএ ভালো না থাকলেও আপনার টিচারের শক্তিশালী রিকমেন্ডেশন লেটারের কারণে আপনার স্কলারশিপ হয়ে যেতে পারে। 

কে দেবেন আপনার এলওআর?

পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি প্রোগ্রামে (অনার্স,  মাস্টার্স বা পিএইচডি) আবেদনের ক্ষেত্রে দুই-তিনটি রিকমেন্ডেশন লেটারের প্রয়োজন হয়। যার মধ্যে একাডেমিক রিকমেন্ডেশন লেটারের ভ্যালু বেশি। সাধারণত রিকমেন্ডেশন লেটার আপনার প্রফেসর, শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজারের আন্ডারে কাজ করেছেন তিনি দেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এটা আলাদা হতে পারে। রিকমেন্ডেশন লেটার এমন কারো থেকে নেয়া উচিত, যিনি আপনাকে ভালোভাবে চেনেন, আপনার একাডেমিক বা প্রফেশনাল বিষয়ে আপনার সম্পর্কে বলতে পারবেন। তবে অনেক সময় শিক্ষকদের কাছে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে গেলে তারা খসড়া করে দিতে বলেন। এর পেছনে দুটি কারণ থাকে। প্রথমত, সম্মানিত শিক্ষকরা প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে খসড়াটা আপনাকে করতে বলা হয়। দ্বিতীয়ত, আপনার সিভি কিংবা মোটিভেশন লেটার সম্পর্কে আপনার প্রফেসর হয়তো বিস্তারিত জানেন না। তাই উচিত একটি খসড়া লিখে দেয়া। পরবর্তী সময়ে সুপারভাইজার বা রিকমেন্ডার এটিকে এডিট করে সাবমিট করতে পারবেন। 

কীভাবে লিখবেন একটি রেকমেন্ডেশন লেটার?

একটি রিকমেন্ডেশন লেটারকে কয়েক ধাপে ভাগ করা যায়। 

১. শিক্ষকের নাম এবং সংক্ষিপ্ত পরিচয়, সেই সঙ্গে কেন এই লেটার লেখা হচ্ছে সেটা লিখে দেয়া । যেমন—I am Dr. John, a Lecturer in the Department of Political Science at the University of California, USA. It is with great pleasure that I write this letter of recommendation for Mr. Mohammad.

২. রিকমেন্ডারের সঙ্গে ছাত্রের সম্পর্ক। এ প্যারায় ব্যাখ্যা করা থাকবে যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ছাত্রকে কীভাবে চিনেন, একসঙ্গে কাজ করেছেন কিনা, কোন কোন কোর্স পড়িয়েছেন, রেজাল্ট কী রকম ছিল এসব উল্লেখ থাকতে পারে।

যেমন—I have had the pleasure of knowing Mr. Mohammad for over three years, during which time I have had the opportunity to teach him in three distinct courses in his undergraduate studies. His academic performance places him in the top 2% of students in his class, showcasing his exceptional aptitude and dedication to his studies.

৩। পরবর্তী প্যারায় একাডেমিক অর্জন, গবেষণা দক্ষতা, কোনো অ্যাওয়ার্ড পেয়ে থাকলে সেগুলো উল্লেখ করা যেতে পারে।  যেমন—Mr. Mohammad has consistently upheld a remarkable CGPA of 3.8 out of 4.00 during his undergraduate studies. He has demonstrated excellence in courses such as Politics and State, Foreign Policy Analysis, and South Asian Politics, earning A+ grades in all of these subjects. 

৪। এখানে ছাত্রের ব্যক্তিগত গুণাবলি উল্লেখ করা যেতে পারে। এটা হতে পারে লিডারশিপ, কমিউনিকেশন কিংবা যেকোনো ক্রিয়েটিভ স্কিল। যেমন—He possesses exceptional perseverance and dedication, as evidenced by his ability to successfully balance demanding coursework with extracurricular activities. 

৫। এখানে একজন ছাত্র যেই প্রোগ্রামে আবেদন করছে সেই প্রোগ্রাম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতাও উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন - During his internship at the Center for Global Studies, Mohammad conducted field research on US-China soft power in Bangladesh and had the opportunity to visit China. 

৬। শুধু প্রশংসা করলেই হবে না, কৌশলী হয়ে দুর্বলতাও তুলে ধরাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেমন—While he initially faced challenges with public speaking, Mohammad proactively sought opportunities to enhance his communication skills through workshops and presentations. 

৭। সমাপনী প্যারায় উল্লেখ থাকবে, যে শিক্ষক তাকে রিকমেন্ড করছেন এবং কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্যে। যেমন—I have the utmost confidence in his abilities and believe he will excel in achieving his academic goals. Should you require any additional information or have further inquiries, please do not hesitate to contact me.

৮। লেটারের শেষে শিক্ষকের নাম, পরিচয় এবং ই-মেইল থাকবে। সবশেষ পরামর্শ হলো রিকমেন্ডেশন লেটারে দেয়া তথ্য যেন আপনার সিভি, মোটিভেশন লেটার এগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও যৌক্তিক হয়। আপনার উচ্চশিক্ষার যাত্রা সফল ও সুন্দর হোক।

মো. ওবায়দুল্লাহ: প্রভাষক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন