প্রোটিয়াদের কাছে ১ রানের হার

বাংলাদেশকে বার্তা দিল নেপাল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে গতকাল অনুশীলন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এ মাঠে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল ছবি: বিসিবি
Default Image

আজ দিবাগত রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে ঈদের আনন্দ। এদিন প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি জিতে বাংলাদেশের ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে চান নেদারল্যান্ডস ম্যাচে জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। যদিও গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর মাত্র ১ রানে হার মানা নেপালিরাও বিশেষ বার্তা দিয়ে রাখল বাংলাদেশকে।

ম্যাচটি সেন্ট ভিনসেন্টের স্থানীয় সময় রোববার রাতে হলেও বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু হবে। ফলে এটি বাংলাদেশের ঈদের দিনই পড়েছে। 

শ্রীলংকার পর ‘ডি’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে বিদায় নেয় নেপাল। শেষ দুটি ম্যাচ তারা শুধু গৌরবের জন্যই খেলছে। তবে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ বটে। ম্যাচটি থেকে ন্যূনতম এক পয়েন্ট পেলেই সুপার এইট নিশ্চিত হবে টাইগারদের। জিতলে তো কথাই নেই। আর হারলেও সুপার এইটে ওঠার সুযোগ আছে, এজন্য সোমবার আরেক ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে নেদারল্যান্ডসকে হারতে হবে কিংবা ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হতে হবে। ডাচরা সুপার এইটে যেতে চাইলে বাংলাদেশকে হারতে হবে নেপালের কাছে, সেই সঙ্গে শ্রীলংকা ম্যাচে তাদের জিততে হবে বড় ব্যবধানে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সুপার এইট দেখছে।

নেপালের বিপক্ষে এক পয়েন্ট পেলেই ২০০৭ সালের পর আবার সুপার এইটে নাম লেখাবে বাংলাদেশ। ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে, ২০১৪, ২০১৬, ২০২১ ও ২০২২ আসরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় লাল-সবুজরা। দ্বিতীয়বারের মতো সুপার এইটে নাম লেখানোর হাতছানি টাইগারদের সামনে।

বৃহস্পতিবার সেন্ট ভিনসেন্টে আয়ারল্যান্ডকে হারানোর পর ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে সাকিব বলছিলেন, ‘অবশ্যই নেপালের সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। জিততে পারলে আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাব। আমাদের জন্য অনেক বড় একটা অর্জন হবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা মুখিয়ে আছি সামনের ম্যাচের জন্য। ঈদের দিন, মুসলমান যারা আছি তাদের জন্য আনন্দের একটা দিন। বিশেষ করে বাংলাদেশে সবাই উদযাপন করে। অন্য ধর্মের মানুষরাও ঈদের দিন আনন্দ করে। তো আশা করব, এ রকম ঈদের একটা দিনে তাদের মুখে আরো বেশি হাসি ফোটাতে পারব।’

এদিকে বাংলাদেশ ম্যাচের আগে গতকাল পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জিততে জিততে হেরে গেল নেপাল। আগে ব্যাটিং করা প্রোটিয়াদের ৭ উইকেটে ১১৫ রানে আটকে দেন নেপালের বোলাররা। কুশল ভুরতেল ১৯ রানে চারটি ও দিপেন্দ্র সিং আইরে ২১ রানে তিনটি উইকেট নেন। ১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করা নেপালিদের শেষ বলে দুই রানের প্রয়োজন ছিল। এক রান নিলেও ম্যাচটা টাই হয়ে যায়। তবে ইতিহাস গড়া হলো না। রান নেয়ার জায়গায় উল্টো রানআউট হয়ে গেলেন গুলশান ঝা। 

এত বড় সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় স্বভাবতই আক্ষেপে পুড়ছেন নেপালি ক্রিকেটার ও সমর্থকরা। যদিও রোহিত পাউডেল দল নিয়ে গর্বিত। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে এতটা চাপে ফেলা এবং জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করাকেই বড় করে দেখছেন নেপাল অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘দলকে নিয়ে আমি গর্বিত। বিশেষ করে যেভাবে আমরা বোলিং ও ব্যাটিং করেছি। এসব নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। এ যেন খুব কাছে, কিন্তু দূরে। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোয় আমরা ভালো করেছি। তবে যেভাবে আমরা লড়াই করেছি, তা দারুণ। আমরা যদি এ রকম বড় টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেলতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো (জয়ের বিচারে) বিপরীত পাশেই থাকব।’ 

ডালাস কিংবা ফ্লোরিডা—সবখানেই নেপালের বিপুল দর্শক হাজির হয়েছেন মাঠে। সেন্ট ভিনসেন্টের গ্যালারিতেও কাল বেশকিছু সমর্থককে দেখা যায়। ম্যাচ হারার পর সেই সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুললেন না রোহিত পাউডেল। তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, সম্ভাব্য সেরা উপায়ে তারা আমাদের সমর্থন জানাচ্ছে। অনেকেই অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে। এমনকি বৃষ্টির মধ্যেও সমর্থন দিয়েছে, আমাদের পাশে থেকেছে এবং আমাদের সমর্থনে সবকিছু করেছে।’

এ সেন্ট ভিনসেন্টেই বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের লড়াই হবে। বাংলাদেশ ম্যাচটি নিয়ে আগে যতই নির্ভার ছিল না কেন, গতকালের ম্যাচের পর নিশ্চয়ই সেই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসবেন শান্ত ও তার সতীর্থরা। কেননা সুযোগ দিলেই যে নেপালিরা কাজে লাগাতে পারবেন, সেটি দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন।

নেপালিদের লড়াকু মানসিকতা নিয়ে ম্যাচসেরা দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার তাবরাইজ শামসি বলছেন, ‘আমি মনে করি, তারা দুর্দান্ত ছিল। কন্ডিশনের পুরো সুবিধা তারা লুফে নিয়েছে। উইকেট দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো ছিল। তবে তারা সুন্দর ক্রিকেট খেলেছে।’

প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করামের প্রশংসাও পেলেন পাউডেলরা। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো নেপাল আমাদের বিপক্ষে যেভাবে বোলিং করেছে সেটি সত্যিই কঠিন ছিল। তারা আমাদের অনেক চাপে রেখেছে। মনে হয় তাদের কারণেই আমরা পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে পারিনি।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র একবারই দেখা হয়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের। ২০১৪ সালে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে নেপাল, যে আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশে। সেবার চট্টগ্রামে নেপালকে ২৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১২৬ রান তুলেছিল নেপাল। পেসার আল-আমিন হোসেন ১৭ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। পরে এনামুল হক বিজয় (৪২), সাকিব (৩৭*) ও তামিম ইকবালের (৩০) ব্যাটে ভর করে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ।

কাল কি মুখোমুখি লড়াইটা ২-০ করবে বাংলাদেশ, নাকি দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন স্মরণীয় করে রাখবে গোর্খালিরা?

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন