শিল্প পুলিশ ও বিজিএমইএর দাবি

বেতন-বোনাস পরিশোধ প্রায় শতভাগ কারখানায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

( ফাইল ছবি)

ঈদুল আজহার সরকারি ছুটির আগেই গার্মেন্টসহ সব খাতের শ্রমিকদের উৎসব ভাতাসহ বেতন পরিশোধ নিশ্চিতের ঘোষণা দিয়েছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শিল্প অধ্যুষিত এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শিল্প পুলিশ ও বৃহত্তম শ্রমঘন খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা দাবি করছেন, প্রায় শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস ও ভাতা পরিশোধ হয়েছে। 

ঈদকেন্দ্রিক শ্রম পরিস্থিতি নজরদারি, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছরের মতো এ বছর ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয় সরকার, শ্রমিক ও মালিক সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) সভা। ১৮তম ওই সভা শেষে ঘোষণা আসে ঈদুল আজহার সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার আগেই গার্মেন্টসহ সব খাতের শ্রমিকদের উৎসব ভাতা ও বেতন পরিশোধ করা হবে। শ্রমিকদের ঈদের ছুটি যাতে স্বস্তিদায়ক হয়, এ বিষয়ে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া ঈদের আগে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই বা কারখানাগুলো লে-অফ করা যাবে না—এমন সিদ্ধান্তের কথাও জানানো হয়। 

প্রতি বছরই ঈদের আগে শ্রম পরিস্থিতির ওপর বিশেষ নজরদারি ও তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিল্পসংশ্লিষ্ট ও শ্রমঘন খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবার ঈদুল আজহায় শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে বেতন-বোনাস পরিশোধসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। শিল্পসংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠনগুলো থেকেও সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকিতে ও নজরদারিতে থাকা কারখানার সংখ্যাসংক্রান্ত কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। তবে শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলো থেকে সরজমিন তথ্যানুসন্ধান করে এখন পর্যন্ত ঈদের বেতন-বোনাস পরিশোধসংক্রান্ত খুব বড় মাত্রায় কোনো অসন্তোষের তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সূত্র জানিয়েছে, শিল্প অধ্যুষিত এলাকার বড় কারখানাগুলোয় বেতন-বোনাস পরিশোধসংক্রান্ত কোনো গোলযোগ দেখা দেয়নি। প্রতি বছরের মতো এবারো কিছু সাব-কন্ট্রাক্টভিত্তিক অনিবন্ধিত কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ না করার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেগুলো নিয়ে খুব বড় আকারের কোনো অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি।

শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদ উদযাপনকে কেন্দ্র করে শিল্প-কারখানায় শ্রমিকরা যাতে তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা এবং ছুটি যথাসময়ে পান সেজন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আগেও কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে মোতাবেক মাঠ পর্যায়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সদস্যরাও পরিশ্রম করছেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ শিল্প-কারখানায় কর্মরত সব শ্রমিক ভাই-বোন সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। শিল্প পুলিশের এ উদ্যোগে শিল্প মালিকদের সংগঠনগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বেতন-ভাতা যথাসময় পরিশোধ করা হয়েছে। 

তবে বণিক বার্তার সরজমিন তথ্যানুসন্ধানে গতকাল গাজীপুরে বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ ও লে-অফ প্রত্যাহার করে কারখানা চালুর দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনা জানা গেছে। এ সময় শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটে।

সকাল থেকে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার বড়বাড়ী এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার বড়বাড়ী এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামের কারখানাটিতে শ্রমিকদের চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। এছাড়া গত বছরের বার্ষিক ছুটির টাকা ও ২ মাস ১৯ দিনের বেতন বকেয়া রয়েছে। 

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেতন-ভাতা, বোনাস ও লে-অফ প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে শ্রমিকরা পুনরায় কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নেন। পরে তারা বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এতে মহাসড়কে প্রায় ২০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ ছিল। 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে ১০ মিনিটের মতো যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। মহাসড়কে যান চলাচলও স্বাভাবিক আছে। শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’

শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় সবচেয়ে শ্রমঘন খাত পোশাক ও বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো। পোশাক পণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করছে, পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বিকালে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের জন্য ঈদুল আজহা আনন্দময় করতে কষ্ট করে হলেও যথাযথ পাওনাদি পরিশোধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় এবং সবার সহযোগিতায় এবারো শ্রমিকরা উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করতে যাচ্ছেন।

পোশাক শিল্পে বেতন-ভাতা পরিশোধ সম্পর্কে বিজিএমইএর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় চালু কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৮৩৫টি ও চট্টগ্রামে ৩২৫টিসহ সর্বমোট পোশাক কারখানা রয়েছে ২ হাজার ১৬০টি। মে মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে শতভাগ কারখানায়। ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে শতভাগ কারখানায়। চারটি কারখানায় উৎসব ভাতা প্রদান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা গতকালের (শনিবার) মধ্যে পরিশোধ হওয়ার কথা। এছাড়া আর কোথাও বেতন-ভাতা পরিশোধ বাকি রয়েছে, এমন কোনো তথ্য বিজিএমইএর জানা নেই। 

উত্তরায় গত ১ জুন শিল্প পুলিশের হেডকোয়ার্টারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঈদ উদযাপনের আগেই সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিল্প শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়। এ সময় শিল্প পুলিশের প্রধান বলেন, ‘মালিকরা যদি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা যথাসময়ে পরিশোধ করেন তাহলে শিল্প খাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সঠিক থাকবে এবং আমাদের মহাসড়কগুলোও নিরাপদ থাকবে। যেসব শিল্প-কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও পাওনাদি যথাসময়ে পরিশোধ না করে প্রবাসে অবস্থান করবেন, তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংগঠন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন