প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন আগামীকাল

জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন ২৭ সেপ্টেম্বর

বাসস

ছবি : সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগদানের জন্য আগামীকাল নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তার উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্কে বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে। এবার নিরাপত্তা, গণমাধ্যমসহ সব মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন ৫৭ জন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। 

এদিকে জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন বলে গতকাল দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে। দুই দেশের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর দিয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তার বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশে গত দুই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের কথা তুলে ধরবেন এবং একটি গণমুখী, কল্যাণধর্মী ও জনস্বার্থমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতি তার অঙ্গীকার পুনরুল্লেখ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ, অভিবাসী অধিকার রক্ষার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। প্রধান উপদেষ্টা মাত্র তিনদিন নিউইয়র্কে থাকবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। প্রধান উপদেষ্টা পূর্ববর্তী সরকার প্রধানদের মতো চার্টার ফ্লাইটে নয়, বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাতায়াত করবেন।’

অধ্যাপক ইউনূসের অংশগ্রহণের তাৎপর্য তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত সম্মানিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেবে। এটি গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষণীয় যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংস্কার শুরু করেছে এবং এ ইউএনজিএ অধিবেশন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনের একটি চমৎকার সুযোগ।’ 

তৌহিদ হোসেন জানান, নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধান উপদেষ্টা নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএআইডি প্রশাসক অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তির বছর। এ কথা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ মাইলফলক উপলক্ষে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ইউনূসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করবে। আমরা আশা করি, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের নেতারা, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং সম্ভবত কিছু রাষ্ট্রপ্রধান এতে উপস্থিত থাকবেন।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি কর্ম-সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা চালাতে হবে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা-নয়াদিল্লি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। সব সমস্যা সমাধান করে, আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

দুই দেশের মধ্যে বর্তমান টানাপড়েনের কথা স্বীকার করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই টানাপড়েন স্বীকার করতে হবে। আমরা যদি সমস্যার মোকাবেলা না করি, আমরা তা সমাধান করতে পারব না।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন