৩০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

জনবল কাঠামোর বাইরে ও ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ-পদোন্নতি

ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া

ছবি : বণিক বার্তা

দেশে উচ্চশিক্ষার প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বিধিবহির্ভূত নিয়োগের কারণে গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সাবেক উপাচার্য দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের জন্য সংবাদমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০২২ সালের নভেম্বরে। বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, এতে নিয়োগ হওয়ার কথা ৩৯ জনের। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। এতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড নিয়োগ দিয়েছে ৫৮ জনকে। সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার কথা তিনজনের, পেয়েছেন ছয়জন। একইভাবে ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট পদে ছয়জনের পরিবর্তে নয়জন ও অফিস সহায়ক পদে পাঁচজনের পরিবর্তে ১১ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত অর্গানোগ্রাম বা জনবল কাঠামো অনুযায়ী, এখানে সেকশন অফিসার থাকার কথা মোট ৩০ জন। যদিও বর্তমানে সেখানে নতুন নিয়োগ পাওয়া ছয়জনসহ সেকশন অফিসার আছেন ৫০ জন। আইকিউএসি বিভাগের হিসাবরক্ষক পদের অনুমোদন না থাকলেও একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত চলমান রয়েছে। 

দেশের বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক বছরে এমন অনেক নিয়োগ-পদায়ন ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, যেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ইউজিসির অনুমোদনহীন পদে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে অনেক। 

কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল কাঠামো কেমন হবে বা কোন পদে কতজন নিয়োগ দেয়া হবে তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে উল্লেখ করা থাকে। এ জনবল কাঠামোয় অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্গানোগ্রামের বাইরে জনবল নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই। আবার এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমোদনেরও প্রয়োজন পড়ে। যদিও দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবেই এসব নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠছে। 

চলতি মাসেই ইউজিসিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত মূল বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এ সময় সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেয়া এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, অর্গানোগ্রামের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে বা ইউজিসির অননুমোদিত পদে নিয়োগ, আপগ্রেডেশন ও বেতন-ভাতা দিচ্ছে দেশের ৩০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে নিয়োগ-পদোন্নতি সবচেয়ে বেশি দেয়া হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অর্গানোগ্রামে না থাকলেও সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট, সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর ইত্যাদি এমন বিভিন্ন পদ তৈরি করে পদোন্নতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে অনেকটা নিজেদের মতো করে আলাদা নীতিমালা তৈরি করে। এছাড়া অনেক সময় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইউজিসির অনুমতি নেয়া হয় না এবং যথাযথভাবে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয় না।

এ ধরনের নিয়োগের বিষয়ে ইউজিসি শক্ত অবস্থান নিয়েছে জানিয়ে সংস্থাটির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিয়োগসহ যেকোনো আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছি। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের নিয়োগ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেমন অননুমোদিত পদের জন্য বেতন-ভাতা ছাড় করা হচ্ছে না। তাদের অনেক বিষয়ের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ বাতিলের সুপারিশও করা হচ্ছে।’

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এখানে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও অতিরিক্ত পরিচালক পদে নিয়োগ বা পদোন্নতির কোনো সুযোগ নেই। যদিও ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পঞ্চম গ্রেডের আট কর্মকর্তা এসব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে চারজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, একজন অতিরিক্ত গ্রন্থাগারিক, দুজন অতিরিক্ত পরিচালক ও একজন অতিরিক্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রয়েছেন। এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ইউজিসি থেকে একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পুনরায় এসব পদে চারজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের অর্গানোগ্রামে কোনো ‘এডিশনাল’ (অতিরিক্ত) পদ নেই। তবে নিজস্ব নীতিমালার মাধ্যমে এমন পদে পদোন্নতির একটি সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রথমে যখন এ ধরনের চারটি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, তখনই ইউজিসি এবং সিজি অডিট থেকে আপত্তি জানানো হয়। এরপরও পুনরায় তিনজনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। সর্বশেষ আবারো যখন চারজনকে এ ধরনের পদে পদোন্নতি প্রদানের চেষ্টা করা হলো তখন আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা ও আমাদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

চেষ্টা করে বক্তব্য পাওয়া যায়নি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তেরও। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে বিভিন্ন সময়ে তারা মৌখিকের পরিবর্তে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণেরও সুপারিশ করেছিলেন। তবে তা করা হয়নি। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই ১৯টির মতো পদে নিয়োগ দেয়ার ঘটনাও এখানে ঘটেছে। 

শিক্ষাবিদরা বলছেন, দুর্নীতি বা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়াও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটসহ পারিপার্শ্বিক নানা কারণেও অনেক সময় এ ধরনের নিয়োগের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধ্যাপক রেবেকা বানু এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার এ-ও দেখা যায়, প্রয়োজনীয়সংখ্যক পদের অনুমোদনও নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শিক্ষক প্রয়োজন হয়, তখন দেখা যায় বিধি অমান্য করে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাহিদা পূরণ করতে গিয়েই করতে হচ্ছে। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে এমন সংকট নেই, সেসব জায়গায় যদি এমন ঘটনা ঘটে, তাহলে সেখানে দুর্নীতি ও অবৈধ নিয়োগের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয় থাকতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের নিয়োগ বন্ধ করতে সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল থাকার পরও যদি কেউ এ ধরনের নিয়োগ দেয় তবে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধে নিয়োগ বোর্ড, সিন্ডিকেট বা রিজেন্ট বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতির ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। অনেক সময় দেখা যায় শর্ত শিথিল করে নিয়োগের ঘটনা ঘটে, এগুলো কাম্য নয়। যারা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তাদের নিয়ম-নীতি অনুযায়ীই সব করা উচিত। এছাড়া এ ধরনের বিষয় বন্ধে নিয়োগ বোর্ড এবং সিন্ডিকেটের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। যেমন, যেকোনো নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়েছে কিনা, সেটি বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যেরই নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরি। এটি করা হলে প্রাথমিক অবস্থায়ই অনিয়মগুলো ধরা পড়বে এবং বিষয়গুলো আর বড় আকার ধারণ করতে পারবে না।’

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ীই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়োগ-পদোন্নতি দিচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট উপাচার্যরা। এসব নিয়োগ-পদোন্নতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ার কথা নয় বলেও দাবি করছেন তাদের কেউ কেউ।

অর্গানোগ্রাম ও ইউজিসি অনুমোদিত পদের বাইরে নিয়োগ-পদোন্নতি ও বেতন-ভাতা পরিশোধের অভিযোগ ওঠা ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ই নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ইউজিসির পক্ষ থেকে অনুসন্ধানও করা হয়েছে। 

জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য ড. শেখ আবদুস সালাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমি আমার মেয়াদে কোনো ধরনের অনিয়ম করিনি এবং নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো নতুন নিয়মও তৈরি করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব নিয়ম-নীতি রয়েছে সে অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছি। যেহেতু এসব নিয়ম আগে থেকেই প্রচলিত এবং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুমোদিত এসব নিয়মের সঙ্গে অর্গানোগ্রামের কোনো অসামঞ্জস্য থাকার কথা না।’

অনুমোদন-বহির্ভূতভাবে নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও। বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার এক উপপরিচালককে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। তবে ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির এ পদের অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের পদে নিয়োগের আগে ইউজিসির কাছ থেকে পদের অনুমোদন নিতে হয় এবং বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পূর্ণ নিয়োগ দিতে হয়। ইউজিসির পক্ষ থেকেও এ ধরনের পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সময় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘সাবেক উপাচার্য এ পদে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে পদটিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নিয়ম অনুসরণ করেই সবকিছু করছি।’

ইউজিসির নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এ নিয়োগ নিয়মবহির্ভূতভাবে হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমোদন নেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদিও অনুমোদন ছাড়াই এ ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রথমে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় এবং পরে অন্তর্বর্তী প্রার্থী দেখিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। আবার এ নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, ‘আমরা ইউজিসির চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে তারা বেশকিছু সুপারিশ করেছে এবং আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শিরিন আখতার তার মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ৩২ জনকে নিয়োগ দেন। অভিযোগ উঠেছে, এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া বা ইউজিসির অনুমোদন নেয়া—কোনোটাই হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘এর আগে যা হয়েছে সে বিষয়ে আমি মন্তব্য করছি না। তবে আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিধিবহির্ভূত কোনো নিয়োগের ঘটনা ঘটেনি। আমি যতদিন দায়িত্বে আছি, ততদিন বিধিবহির্ভূতভাবে কোনো নিয়োগ বা পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হবে না।’

অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত নিয়োগ হ্রাস পাবে বলে আশাবাদী ইউজিসির চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এ ধরনের চর্চা রয়েছে। ইউজিসি এসব বিষয় দূর করতে কাজ করছে। সম্প্রতি আমাদের পূর্ণ কমিশন সভায় অভিন্ন আর্থিক নীতিমালা পাস হয়েছে। এটি কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ ধরনের অনিয়ম হ্রাস পাবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন