যমুনায় ভাঙছে মানিকগঞ্জের আলোকদিয়া চর

মনিরুল ইসলাম মিহির, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জের আলোকদিয়া চরের তিন-চার কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দেয় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া চরে। প্রতি বছরই চরের ফসলি জমি ও ঘরবাড়িসহ কিছু স্থাপনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। চলতি বর্ষায় চরে ভাঙনের গভীরতা গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। ভাঙনের সীমানা প্রায় তিন-চার কিলোমিটার বলে জানিয়েছেন চরের বাসিন্দারা। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও এবার তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। চর রক্ষায় কোনো প্রকল্পও নেই তাদের হাতে।

চরের বাসিন্দারা জানান, যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকদিন ধরে আলোকদিয়া চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি ও ঘরবাড়িসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কিল্লা। ভাঙনকবলিত চরের বাসিন্দারা ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিচ্ছে।

আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা নবীন শেখ বলেন, ‘যমুনা ১০ বার আমার বাড়িঘর ভেঙেছে। এখন আবারো ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছি। দেশে কত কাজ হচ্ছে, কিন্তু চরাঞ্চলে ভাঙন রোধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

চরের বাসিন্দারা জানান, ভোটের আগে সবাই বলেন, ভোট দিলে নদীভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে আর কোনো খোঁজ থাকে না তাদের।

তবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যমুনা নদীবেষ্টিত আলোকদিয়া চরের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। চরটি প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হয়। এবার ভাঙনের গভীরতা অনেক বেশি। ভাঙনের সীমানা প্রায় তিন-চার কিলোমিটার পর্যন্ত। সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। চর রক্ষায় কোনো প্রকল্পও নেই। কয়েকদিন আগেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা যেন মুজিব কিল্লাসহ সরকারি স্থাপনাগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়।’

সরজমিনে দেখা গেছে, চরের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ১০ দিনের ব্যবধানে আধা কিলোমিটার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। চরাঞ্চলে বেলে-দোআঁশ মাটি হওয়ায় সহজে পাড় ভেঙে নদীতে বিলীন হচ্ছে। চরে মুজিব কিল্লার ঠিক সামনে রয়েছে টেংগুরহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩০০ গজের মধ্যে চলে এসেছে নদীভাঙন। যেকোনো সময় বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে চরের মানুষ। এছাড়া চর মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাদিয়া সরকারি প্রাথমিক, ত্রিশুন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রঘুনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। চরবাসীর দাবি, জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকাতে না পারলে হয়তো পুরো চর বর্ষা মৌসুমেই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

গত বছর ভাঙনের শিকার হয় চর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। পরে অস্থায়ীভাবে পাঠদান শুরু করা হয় মুজিব কিল্লায়। তবে নদী এখন যেভাবে ভাঙছে, তাতে সেটিও যেকোনো সময় বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। মুজিব কিল্লায় আশ্রয় নেয়া ৫০টি পরিবারও দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

চর মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি বছর চরাঞ্চল যমুনায় বিলীন হতে হতে একেবারে সংকুচিত হয়ে গেছে। স্কুলটি এ পর্যন্ত তিনবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এখন মুজিব কিল্লায় অস্থায়ীভাবে ক্লাস নিচ্ছি। এটাও যেকোনো সময় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

টেংগুরহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের আশপাশের বাড়িঘরে ভাঙনের কারণে বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। এখন ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।’

বেশ কয়েকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বিশাল এ চরে ভাঙন প্রতিরোধ অনেক কঠিন। আপাতত যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা মুজিব কিল্লাটি সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করে ভবনটি নিলামে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বাড়িঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কোনো প্রকল্প নেবে না, সেহেতু মুজিব কিল্লাটি সরিয়ে অন্যত্রে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে এটি ভেঙে ফেলার নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিও চলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন