দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪

আরো অবাসযোগ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

বাসযোগ্য শহরের বৈশ্বিক তালিকায় আরো পিছিয়ে পড়েছে ঢাকা। গতকাল ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪ অনুযায়ী, ১৭৩টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৬৮তম। গত বছর ১৬৬তম স্থানে থাকা ঢাকার অবস্থান চলতি বছর দুই ধাপ পিছিয়েছে। এ তালিকার সমর্থন মিলেছে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বক্তব্যেও।

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে মন্ত্রী বলেন, ‘‌রাজধানী ঢাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ বাড়িঘর অনুমোদনহীন। ‘টেকসই শহর তৈরি: বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ ও বাধা’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে বিআইআইএসএস।

এদিকে দ্য গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স-২০২৪ অনুযায়ী, তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। ভিয়েনার চমৎকার অবকাঠামো, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, বিনোদন, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা শীর্ষস্থান পেতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক), জুরিখ (সুইজারল্যান্ড), মেলবোর্ন (অস্ট্রেলিয়া) ও ক্যালগেরি (কানাডা) রয়েছে পরবর্তী শীর্ষস্থানীয় শহরগুলোর মধ্যে।

শীর্ষ দশের মধ্যে এশিয়ার একমাত্র শহর জাপানের ওসাকা, যার অবস্থান নবম। ওসাকার পয়েন্ট ৯৬, আর ঢাকার পয়েন্ট ৪৩। বাসযোগ্যতার দিক থেকে তালিকার একেবারে শেষের দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশের রাজধানী।

তালিকায় সবার শেষে আছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। নিচ থেকে শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো ত্রিপোলি, আলজিয়ার্স, লাগোস ও করাচি। বাসযোগ্যতার তালিকা তৈরির সময় পাঁচটি মাপকাঠিকে বিবেচনায় নেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭৩টি শহরের গড় স্কোর ছিল ১০০-এর মধ্যে ৭৬ দশমিক ১, যা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। তবে ভূরাজনৈতিক সংঘাত, গণঅসন্তোষ ও আবাসন সংকট অনেক শহরেই প্রকট বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

ইআইইউর ডেপুটি ইন্ডাস্ট্রি ডিরেক্টর বারসালি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‌গত বছর বিশ্বব্যাপী শহরগুলোর বাসযোগ্যতা সামান্য বেড়েছে। কিন্তু স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়ে গেছে। উচ্চ সুদহার এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে বিশ্বকে আরো একটি বছর পার করতে হচ্ছে।’

ইনডেক্স অনুযায়ী, দামেস্কের সঙ্গে সিরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে কম বাসযোগ্য শহর। এর ঠিক ওপরে অবস্থান নিয়েছে লিবিয়ার ত্রিপোলি, আলজেরিয়ার আলজিয়ার্স ও নাইজেরিয়ার লাগোস।

নগরায়নের সঙ্গে প্রকৃতির বিস্তৃতির কথাও খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‌শুধু ভবন তোলা এবং কিছু মানুষের বসবাসের সুবিধা ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুক্ত করলে চলবে না। আরো অনেক কিছু দেখতে হবে। আমরা নগরায়নের নামে বুড়িগঙ্গাকে শেষ করে দিয়েছি। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, পুরো পানি ব্যবস্থাটাকেই আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। এটাকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সেটাকেও নগরায়ণের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করতে হবে। আমরা নগরায়ণ করতে গিয়ে যত কৃষিজমি আছে, যত জলাশয় আছে, সব তো ধ্বংস করে দিয়েছি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য মহাপরিকল্পনা দরকার।’

ঢাকার বাসযোগ্যতা ধীরে ধীরে বাড়বে বলে মনে করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌শহরের বাসযোগ্যতার বিষয়টি নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক যে প্যারামিটার রয়েছে সেখানে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে দেখা হয়। তার মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গণপরিসর ও সাংস্কৃতিক বিকাশ অন্যতম। আমাদের শহরে এখনো স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে রোগীরা সন্তুষ্ট নয়। ঢাকা মেডিকেল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলসহ (পিজি) সরকারি হাসপাতালগুলোর বাইরে যে ক্লিনিক বা হাসপাতাল আছে, সেগুলোর কয়েকটা কক্ষ বা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে চলছে। এক জায়গায় পরীক্ষার ফলাফল আরেক জায়গায় নেয়া যাচ্ছে না। একইভাবে আমাদের শহরে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এ শহরে লোক অনুযায়ী আরো ৬২৭টি বিদ্যালয় প্রয়োজন। বিদ্যালয়ে বড় মাঠ থাকতে হবে। শুধু দালানকোঠা আর বই দিয়ে শিশুর বিকাশ হবে না। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ঢাকার অনেক নামি বিদ্যালয়ের চেয়ে ভালো। বড় মাঠ আছে। আমরা বিদ্যালয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সাংস্কৃতিক বিকাশও আমরা করছি। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী চার-পাঁচ বছরে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন