সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক না কেন তার রক্ষা নেই অভিযান শুরু করেছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নেন ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। যেই হোক, দুর্নীতি করলে রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে আমরা ধরব।’ জাতীয় সংসদে গতকাল প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। 

আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কালো টাকা সাদা না। এখন ঢাকায় এক কাঠা জমি যার আছে, তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক। অনেক সময় এ ধরনের কিছু অতিরিক্ত অর্থ অনেকে দেখাতে পারেন না; কর দিতে পারেন না। আয়কর দিয়ে তারা যেন মূলধারায় ফিরে আসতে পারেন, সেজন্য মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেয়া হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরো অনেকে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও নিয়েছিলেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন; একটু খোঁজ নিতে হবে। আমি জানি না আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কিনা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছাটা কী—দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সেজন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে লক্ষ্যেই আমরা এবারের বাজেট প্রণয়ন করেছি; উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি; এখানে কমানোর কিছু নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ এবারের বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। আবার কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতাও বললেন, এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়; বলেছেন এ চ্যালেঞ্জ নেয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা। চ্যালেঞ্জ নেয়াটাই তো আমাদের কাজ। আমরা তো চ্যালেঞ্জ নিয়েই চলতে চাই এবং চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মোটেই এ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। হ্যাঁ একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি, শতভাগ কখনো পূরণ হয় না, হওয়া সম্ভবও নয়। তার পরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে যে এখানে আমরা যাব; সেটা আমরা যেতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কিছু আঁতেল আছেন, তারা সবকিছুতেই সমালোচনা করেন। ঋণ খেলাপি নিয়ে অনেক কথা, মন্দ ঋণ নিয়ে অনেক কথা। ২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল ১০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে জিডিপির পরিমাণ ৪৬০ বিলিয়ন ডলার। ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। মন্দ ঋণের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, অর্থাৎ এটা কিন্তু হ্রাস পেয়েছে। সেটাকে বলার সময় উল্টো টাকার অংক বলে, কিন্তু শতাংশ বলা হয় না। সেখানে শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। যারা এটা করেন, তা খুবই দুঃখজনক।’

বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনার জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা। যে বিশেষ আইন করেছি, সেটা নিয়েও সমালোচনা শুনছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিশেষ আইন যদি না করতাম, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ না করলে, আজ বিদ্যুৎটা আসত কোথা থেকে? 

লোডশেডিং সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলে দিয়েছি, গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। যে যত বেশি ব্যবহার করবে, তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে।’

জ্বালানি তেল মজুদ রাখার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, এ ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন