সুরমা কুশিয়ারা তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে

ফের বন্যার আশঙ্কা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে

বণিক বার্তা ডেস্ক

উজানের ঢলে ভেঙে গেছে সুনামগঞ্জের একটি সড়ক ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল এবং ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে সুরমা, কুশিয়ারা ও তিস্তা নদীর পানি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশজুড়ে যে বর্ষণ চলছে, তা সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে। এতে নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে সাতদিন মাঝারি থেকে ভারি বা অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। ফলে পানি বাড়তে পারে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে। এক্ষেত্রে সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন সুরমা ও সারিগোয়াইন নদীর পানি দ্রুত বাড়বে। ফলে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।

ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটে ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে তৃতীয় দফা বন্যার দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে সিলেটবাসী। গতকাল সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন নদীর চারটি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোয় সতর্কতা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং জৈন্তাপুরে সারিগোয়াইন নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগে থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলা কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কিছুটা বেড়ে ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল বেলা ৩টায় কুশিয়ারার আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সিলেটে গতকাল ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে সিলেটের নিম্নাঞ্চল এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতেও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আইএমডির তথ্যমতে, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬৪০ মিলিমিটার। সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়ায় গোয়াইনঘাটে তৃতীয় দফা বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছি।’

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, ‘আগামীকাল পর্যন্ত সিলেটে ভারি বৃষ্টির আভাস রয়েছে।’

দুদিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধার প্রধান চার নদ-নদীর পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তার পানি। তবে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ‘গত দুদিন ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃষ্টি ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।’

রংপুরেও তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদীতীরবর্তী কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ৩টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে এসব উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ ষোলঘড় পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘ভয়ের কারণ নেই, বড় বন্যা হবে না, স্বল্পমেয়াদি হতে পারে।’

ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) রাঙ্গামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কের কেংগালছড়ি স্কুলের সামনের অংশটি পানিতে তলিয়ে গেছে।’

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বণিক বার্তার সিলেট, রংপুর, সুনামগঞ্জ ও রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন