সংস্কার হয়নি রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার ১০ কিলোমিটার বাঁধ

এইচ এম জাকির, ভোলা

ছবি : বণিক বার্তা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভোলায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক মাসের বেশি সময় পার হলেও এসব বাঁধ সংস্কার করা হয়নি। ভাঙা বাঁধ দিয়ে দিনে দুবার জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। জেলার সাতটি উপজেলায় প্রায় ২০ গ্রামের ১০-১২ হাজার মানুষকে প্লাবনের মধ্যে পড়তে হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থান দিয়ে পানির স্রোতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব স্থানে এখনো সংস্কার না হওয়ায় দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে প্লাবনের মধ্যে পড়তে হয় ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়েছে চরফ্যাশন ও মনপুরার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে। সেখানকার ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো এখনো সংস্কার করা হয়নি।

মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ কাজল জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পানির চাপে বাঁধের চারটি পয়েন্ট ভেঙে গেছে। ইউনিয়নের দক্ষিণ সাকুচিয়া ও রহমানপুর গ্রামসহ ২, ৩, ৫, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড জোয়ারে প্লাবিত হয়। বাঁধগুলো সংস্কার না করায় এখনো দিনে দুবার এলাকাগুলো জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তার ইউনিয়নে দুই-তিন হাজার মানুষকে বসবাস করতে হয় পানির মধ্যেই।

এছাড়া উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের সোনারচর ও চরযতিনের পূর্ব পাশে বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, প্রায় আধা কিলোমিটারের ওপরে বেড়িবাঁধ ভেঙে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আট হাজার মানুষ এখনো জোয়ারের সময় পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ও কুকরিমুকরি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলো এখনো সংস্কার করা হয়নি। এসব অঞ্চলের মানুষ দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত থাকে।

ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার জানান, ইউনিয়নটির অধিকাংশই স্থানেই বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। বর্তমানে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হওয়ায় ভোগান্তি অনেকটা বেড়েছে।

একই কথা বলেন পাশের ইউনিয়ন কুকরিমুকরির চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজন। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই ইউনিয়নটির বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ নেই, যেটুকু রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। শিগগিরই বাঁধ সংস্কার না করলে সামনের দিনগুলোয় মানুষ আরো বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে।’

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এ পাঁচ কিলোমিটার, ডিভিশন-২-এ ৫ কিলোমিটার। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মনপুরা। সেখানে প্রায় ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলায় ১২টি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ভেঙে ৮-১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। 

এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান মাহমুদ জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার আওতাধীন চারটি উপজেলায় পাঁচ কিলোমিটার বাঁধের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০০ মিটারই হলো মনপুরা উপজেলায়। এ উপজেলায় ১২টি পয়েন্ট দিয়ে ১৬৫ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে। বাঁধগুলো মেরামতের কাজ করছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বাঁধ সংস্কার করা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, তার আওতাধীন তিনটি উপজেলায় পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতি হওয়া বাঁধ সংস্কারে তারা কাজ করছেন। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এ মুহূর্তে তাদের কিছু করণীয় নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন