চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুট

সুলভ শ্রেণীতে শোভন টিকিটের ভাড়া নিচ্ছে রেলওয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ব্যুরো

পুরনো ছবি। বণিক বার্তা।

ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে ১৪টি বিশেষ ট্রেনের ঘোষণা দিয়েছে রেলওয়ে। ২ জুন থেকে সারাদেশে ঈদুল ফিরতের অগ্রিম টিকিটের পাশাপাশি স্পেশাল ট্রেনের টিকিটও বিক্রি করে রেলওয়ে। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণার পরও চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের একজোড়া স্পেশাল (১ ও ২) ট্রেনের টিকিট বিক্রি করেনি রেলওয়ে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাটলের রেক দিয়ে এই রুটে স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করলেও সুলভ আসনের জন্য শোভন শ্রেণীর ভাড়া আদায় করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ১৮৮ কিলোমিটার দূরত্বের সুলভ শ্রেণীর ভাড়া ৯০ টাকা। কিন্তু শোভন শ্রেণীর ভাড়া ১৮০ টাকা। সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের সময় চবি শাটল দিয়ে পরিচালিত চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনে একই আসনকে সুলভ শ্রেণী বিবেচনায় ৯০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু এবার কোনো নিয়ম ও আইনের তোয়াক্কা না করে রেলওয়ের সবচেয়ে নি¤œ শ্রেণীর কোচের আসনের জন্য শোভন শ্রেণীর ভাড়া আদায় করছে।

স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে ট্রেন চলাচল করে একটি। মেঘনা এক্সপ্রেস নামের আন্তঃনগর ট্রেনটি উভয়পথে যাত্রী পরিবহন করে। চাঁদপুর, নোয়াখালী, ক্ষ্মীপুর ছাড়াও চাঁদপুর মেঘনা নদীর অপর পারের বিভিন্ন জেলার মানুষ এই ট্রেনে করে যাতায়াত করে। বিশেষত ভোলা, বরিশাল, রীয়তপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ সহজে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে চাঁদপুর হয়ে চলাচল করে। ঈদ উপলক্ষে এই রুটে যাত্রী চাহিদা বেশি থাকায় এই সময়ে বিশেষ দুই জোড়া ট্রেন সার্ভিস চালু করে রেলওয়ে। কিন্তু যাত্রী চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রেলওয়ে সুলভ শ্রেণীর আসনের জন্য দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এতে রেলের আপাত লাভ হলেও যাত্রী কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

যাত্রী সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সুলভ শ্রেণীর আসনের কোচগুলোতে কোনো বাথরুম নেই। তাছাড়া আসনগুলো শোভন শ্রেণীর চেয়েও অনেক নিম্নমানের। ঈদের সময়ে বাড়তি চাহিদার সুযোগ রেলওয়ে এ বছর দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে। চাঁদপুর রুটে টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় ঈদের সময়ে প্রতিবছর দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালানো হয়। কিন্তু এবার মন্ত্রীর ঘোষণার পরও রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ নির্ধারিত সময়ে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করতে পারেনি। মূলত ইঞ্জিন ও লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনের সার্ভিস কমিয়েছে রেলওয়ে।

চাঁদপুর স্পেশাল ট্রেনটির কম্পোজিশন ১০/২০। প্রতিটি কোচে ৬০টি করে সর্বমোট ৬০০টি আসন রয়েছে। এই ট্রেনের রেকে কোনো বাথরুম থাকে না। এক বগি থেকে অন্য বগিতে যাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। চবি শাটলে ব্যবহৃত ট্রেনটিতে লাইটিং সুবিধাও অপ্রতুল। যার কারণে  ম্যানুয়াল ব্রেক সিস্টেমের কারণে ট্রেনে গতিবেগও কম। অধিক যাত্রী বহনের সময় ট্রেনটির ঝাঁকুনিও বেশি। দীর্ঘদিনের পুরনো কোচ হওয়ার কারণে সুলভ শ্রেণীর সিটগুলোও জরাজীর্ণ। রুটটিতে যাত্রী চাহিদা বেশি হলেও দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্র একজোড়া ট্রেনই ভরসা চাঁদপুর সহ পার্শ্ববর্তী ২১ জেলার মানুষ।

যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, রেলওয়ে ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা করলেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে শুরুতে এক জোড়া ট্রেন চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ইঞ্জিন পাওয়া সাপেক্ষে ঈদের আগে কিংবা পরে এই রুটে আরো এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া ট্রেনের শ্রেণী অনুযায়ী বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি বাণিজ্যিক বিভাগ দেখাশোনা করে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচল করা শাটল ট্রেনের রেকটি ঈদের সময়ে চলাচল বন্ধ থাকায় চাঁদপুর রুটে বিশেষ ট্রেন হিসেবে দেয়া হয়। চবি শাটলের দুটি রেক প্রতিবছর চাঁদপুর পর্যন্ত স্পেশাল সার্ভিস পরিচালনা করলেও এবছর মন্ত্রী ও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সত্ত্বেও একজোড়া স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করেছে রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ। মূলত রেলের যান্ত্রিক প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ইঞ্জিন ও লোকবল সরবরাহের নিশ্চয়তা না দেয়ায় দুই জোড়ার পরিবর্তে একজোড়া স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা। 

রেলের এ সংক্রান্ত নথিপত্র বলছে, ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন (স্পেশাল ১, , ৪), ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার-ঢাকা রুটে এক জোড়া স্পেশাল (৫ ও ৬), চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম রুটে এক জোড়া স্পেশাল (৭ ও ৮), চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে এক জোড়া (৯ ও ১০), ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে (শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল) এক জোড়া (১১ ও ১২) এবং ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে (শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল) এক জোড়া (১৩ ও ১৪) চলাচলের ঘোষণা দেয়া হয়। এরই মধ্যে ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরুর পর চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটের ঈদ স্পেশাল ১ ও ২ এর কোনো টিকিট রেলওয়ে বিক্রি করেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর ও তৎসংলগ্ন জেলার যাত্রী কল্যাণ পরিষদের নেতা মো. মজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রুট চট্টগ্রাম-চাঁদপুর। এক সময় সিলেট-চাঁদপুর রুটও জনপ্রিয় ছিল। চাঁদপুর হয়ে অন্তত ২০ জেলার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু রেলের সবচেয়ে অবহেলিত রুট রয়ে গেছে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর। ঈদের সময়ে সবচেয়ে নিম্নমানের কোচের স্পেশাল ট্রেন দেয়া হলেও সুলভ শ্রেণীর টিকিটে শোভন শ্রেণীর ভাড়া আদায় করছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে রেলের উচ্চ পর্যায়ে স্মারকলিপিসহ প্রতিবাদ জানিয়েছি। মন্ত্রী ঘোষিত দুই জোড়া ট্রেনের পরিবর্তে ঈদ উপলক্ষে এক জোড়া ট্রেন চালানোর মাধ্যমে রেলওয়ে দেশের অন্যতম প্রাচী রেলপথের যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন