কক্সবাজারে ভাড়ায় বাণিজ্যিক ট্রেন চালাবে রেলওয়ে

সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে যুক্ত হচ্ছে এসি, নন-এসি কেবিন

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

ছবি : সংগৃহীত

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন সার্ভিস চালুর পর টিকিটের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি সম্পূর্ণ ট্রেন ভাড়া করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে পিকনিক আয়োজনের চাহিদাও বেড়েছে। এজন্য ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে একক বাণিজ্যিক ট্রেন চালাবে রেলওয়ে। কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চাইলে সম্পূর্ণ ট্রেন ভাড়া নিতে পারবে। এরই মধ্যে বিশেষ একটি স্পেয়ার রেক বা ট্রেন নির্দিষ্ট করে ভাড়ায় চালানোর জন্য প্রস্তুত করেছে রেলওয়ে। এছাড়া ২৮ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিরতিহীন সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে এসি, নন-এসি কেবিন যুক্ত করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ বলছে, প্রথমবারের মতো একটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করে কক্সবাজার ভ্রমণ করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যরা। এরপর রেলওয়ের ঠিকাদার অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ একটি ট্রেন ভাড়া দেয়া হয় কক্সবাজার আসা-যাওয়ার জন্য। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে একটি বিশেষ ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে কক্সবাজারে আসা-যাওয়ার জন্য তিন জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া দেয় রেলওয়ে। এছাড়া ঢাকা থেকে বেশকিছু ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারে ভ্রমণ, পিকনিক ও বার্ষিক এজিএমসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজনে স্পেশাল ট্রেন ভাড়া নিতে রেলওয়েতে আবেদন করে। তবে ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে বরাদ্দ দিতে পারেনি রেলওয়ে। কক্সবাজারে এককভাবে বাণিজ্যিক ট্রেনের চাহিদা বাড়ায় সার্বিক দিক বিবেচনায় এ সুবিধা চালু করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা।

এদিকে কোরিয়ান কোচের রেক দিয়ে বিভিন্ন ট্রেনের রেক পুনর্বিন্যাস ও স্পেয়ার রেক গঠনের বিষয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব রেল ভবনে পাঠানো হয় গত ২৯ এপ্রিল। ১৩ মে রেল ভবনের উপপরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী প্রস্তাবটি অনুমোদন করে ২৬ মে থেকে কার্যকর করতে চিঠি দেন। মূলত কোরিয়া থেকে আমদানীকৃত বিভিন্ন টাইপের কোচ দিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেস, পর্যটক এক্সপ্রেস চালু করা হয়। এছাড়া সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসেও কোরিয়ান কোচের নতুন রেক দেয়া হয়। লটভিত্তিক বিভিন্ন ধাপে আমদানি হওয়ার কারণে শেষদিকে ডব্লিউজেসি ৩০টি কোচের মধ্যে ২৮টি ও ডব্লিউএফসি ছয়টি কোচ জিআইবিআর (গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টর অব বাংলাদেশ রেলওয়ে) অনুমোদন করেছে। এ কারণে দীর্ঘদিন পর নতুন কোরিয়ান কোচের রেক দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে এসি ও নন-এসি কেবিন কোচ সংযোজন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনেও যাত্রী সুবিধা বাড়াতে কেবিন যুক্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রেলওয়ের নতুন কোচগুলো আসার কারণে সেগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনে সংযোজনের পরিকল্পনা ছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়ায় ২৬ মে থেকে সোনার বাংলা, সুবর্ণ, কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে যুক্ত করা হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কক্সবাজার রুটের যাত্রীরা আগের চেয়ে বাড়তি সুবিধা পাবেন।’

রেলওয়ের এ-সংক্রান্ত নথিপত্রে দেখা গেছে, সুবর্ণ ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি নন-এসি কেবিন ও তিনটি এসি কেবিন যুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া ট্রেনটিতে পাঁচটি এসি চেয়ার, ছয়টি শোভন চেয়ার এবং দুটি খাবার গাড়ি-গার্ডব্রেকসহ শোভন চেয়ার কোচ যুক্ত থাকবে। এতদিন কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে শুধু শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার থাকলেও নতুন কম্পোজিশনে তিনটি করে এসি কেবিন কোচ যুক্ত করা হচ্ছে। ১৬/৩২ রেকের ট্রেন দুটিতে আরো থাকবে তিনটি শোভন চেয়ার, সাতটি এসি চেয়ার ও দুটি খাবার গাড়িযুক্ত শোভন চেয়ার কোচ। এদিকে প্রভাতী (৭০৪), গোধূলি (৭০৩) ও তূর্ণা এক্সপ্রেস (৭৪১/৭৪২) ট্রেনে নতুন কোরিয়ান কোচের মধ্যে থাকছে একটি নন-এসি কেবিন, তিনটি এসি কেবিন, পাঁচটি শোভন চেয়ার, ছয়টি এসি চেয়ার ও দুটি খাবার গাড়ি-গার্ডব্রেকসহ শোভন চেয়ার কোচ।

রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ বলছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন খাত থেকে আয় বাড়াতে চাইছে। সর্বশেষ ৪ মে থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনে আরোপ থাকা রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রেনের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের অতিরিক্ত কোচ সংযোজন হলেও সেসব কোচের টিকিটের শোভন চেয়ারে ২০ শতাংশ, প্রথম শ্রেণীর টিকিটে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করবে। এছাড়া আসন সংরক্ষণের মাধ্যমে কামরা বা কোচ বুকিং দিয়ে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও ২০-৩০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া আদায় করবে। এভাবে রেলওয়ে বছরে যাত্রী পরিবহন থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় বাড়াতে চায়।

ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রুটে টিকিটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি আরো পাঁচটি বিশেষ ট্রেন চালিয়েছিল রেলওয়ে। ২০, ২৮, ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং ৬ ও ৭ মার্চ ঢাকা-কক্সবাজারে ট্রেনগুলো যাত্রী পরিবহন করে। এছাড়া শীত মৌসুমে কক্সবাজারে যাত্রী চাহিদা বেড়ে যাওয়া, পর্যটন নগরীতে বিভিন্ন পিকনিক, কনফারেন্স, মিনিটসহ বিভিন্ন ভ্রমণে করপোরেট টিকিট বা ট্রেনের চাহিদা বেড়েছে। উদ্বোধনের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ট্রেন ভাড়া দেয়া হলেও কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে নিয়মিত বিশেষ এ সার্ভিস চালাতে পারছিল না রেলওয়ে। এজন্য বিশেষ একটি রেক নির্দিষ্ট করে ভাড়ায় চালানোর জন্য প্রস্তুত করেছে রেলওয়ে।

রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দুই লেনের সরু সড়কের কারণে বাসে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি বছর এ রুটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দুর্ঘটনায় হতাহত হয় বহু মানুষ। এ কারণে ট্রেন সার্ভিস চালুর পর মানুষ রেলপথেই কক্সবাজার যেতে ইচ্ছুক সবচেয়ে বেশি। রেলের নতুন এ সার্ভিস চালু হলে সড়কপথের ওপর চাপ কমে নিরাপদে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবে মানুষ। পাশাপাশি করপোরেট আয়োজনের সংখ্যা বেড়ে কক্সবাজারের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো বেশি গতিশীল হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন