নদ-নদীর পানি বাড়ছে, উত্তর ও পূর্বে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

কুড়িগ্রামের উলিপুরে চর বালাডোবায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকে ঠাঁই নিয়েছে নৌকায় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উজানের ঢল আর কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে তিস্তা ও কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। এছাড়া সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কোথাও এক সেন্টিমিন্টার কমলে অন্য পয়েন্টে বাড়ছে। উজানের উপজেলাগুলো থেকে পানি নামতে থাকায় ভাটির এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদ-নদী পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে।

সিলেট: গতকাল বুধবার পর্যন্ত সিলেটে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিল। বৃষ্টিপাতও অব্যাহত ছিল। তবে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি নামছে। ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সদর, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়া বাকি সব উপজেলায় গতকাল পর্যন্ত ১৯৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছিল ৮ হাজার ৮২৮ জন মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টি বেশি হলে সিলেটে তার প্রভাব পড়ে। বৃষ্টি ও উজানের ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যা মঙ্গলবার ছিল বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ওপরে। সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জকিগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মঙ্গলবার ছিল বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপরে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন বইছিল বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা আগের দিন ছিল বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপরে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার। 

সুনামগঞ্জ: মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জে কিছুটা কমতে শুরু করেছে ঢলের পানি। জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় উঁচু এলাকার পানি নেমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও প্লাবিত রয়েছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের ১০০ মিটারসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট। জেলা সদরের সঙ্গে ওই সব উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঘোলঘর ও ছাতকে ২৫ মিলিমিটার এবং দিরাই পয়েন্টে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নদ-নদীর পানি কমেছে ২৫ সেন্টিমিটার। তবে ঢলের পানি নদীর তীরবর্তী হাওরের আশপাশের গ্রামগুলোর লোকালয়ে প্রবেশ করায় সেসব স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

রংপুর: তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি সাময়িকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম: ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী অববাহিকার চর ও নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার বেশি পরিবার। চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের মানুষের। নতুন চরে বসত গড়া পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকা ও ঘরের মাচা উঁচু করে বাস করছেন তারা। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নৌকায় করে দূরবর্তী উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা ও মুসার চরে শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ১৭৬ টন চাল ও ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন