অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস

রাজস্ব আহরণে মোট লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি ৮৫,৬২২ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংশোধিত রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল মোট ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মে মাস পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ অনুযায়ী মে মাস শেষে এনবিআরের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ছিল গোটা অর্থবছরের মোট আহরণ লক্ষ্যের তুলনায় প্রায় ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা বা এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি। 

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১১ মাসে আহরিত মোট ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকার মধ্যে প্রত্যক্ষ কর (আয়কর ও ভ্রমণ কর) হিসেবে আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। বাকিটা আহরণ হয়েছে পরোক্ষ কর (আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক ও টার্নওভার ট্যাক্স) হিসেবে। এ ১১ মাসে মোট আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে গত মে মাসে আহরণ হয়েছে ৩৫ হাজার ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থবছরের মোট আহরণের লক্ষ্য পূরণের জন্য জুনে এনবিআরকে রাজস্ব আহরণ করতে হতো আগের মাসের দ্বিগুণেরও বেশি।  

জুনের মধ্যে বাকি রাজস্ব আহরণ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘জুনে বাকি টাকা আহরণ হয়ে যাবে। হওয়া উচিত। শেষ মাসে আহরণ বাড়ে। অনেকে সারা বছর যেগুলো দেয়নি, সেগুলো দিয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে জুলাই মাসেরটা অগ্রিম নিয়ে নেয়া হয়। সেটা আবার আগস্টে সমন্বয় করা হয়। আমাদের এখন বরং নন-এনবিআর কর আহরণ বাড়ানো উচিত।’

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে আমদানি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৫৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা আহরণ করা হয়। আমদানি পর্যায়ে মূসক থেকে ৪ হাজার ৩৮২ কোটি ৩০ লাখ ও সম্পূরক শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আহরণ করা হয়। রফতানি শুল্ক থেকে আহরণের পরিমাণ মাত্র ১ লাখ ও আবগারি শুল্ক থেকে ১১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে মূসক থেকে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি ১০ লাখ ও সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫ হাজার ৮৫০ কোটি ৭ লাখ টাকা আহরণ করা হয়। টার্নওভার ট্যাক্স ১২৮ কোটি ৫৬ লাখ ও স্থানীয় পর্যায়ে অন্যান্য খাতে ৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করা হয়।

মে মাসে আয়কর থেকে ১১ হাজার ৭৩৩ কোটি ৬৯ লাখ ও ভ্রমণ কর থেকে ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা আহরণ করা হয়। সব মিলিয়ে গোটা অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর বাবদ রাজস্ব আহরণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ খাতে মে মাস পর্যন্ত আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ ১১ মাসে প্রত্যক্ষ কর আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। 

দেশে মোট প্রত্যক্ষ করের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আহরণ করে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউনিটটিকে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। মোট প্রত্যক্ষ করের মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এলটিইউর কর বিভাগ মোট ২৮ হাজার ৮৫২ কোটি টাকার কর আহরণ করেছে। এর মধ্যে জুনেই আহরণ হয় ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আহরণ হয়েছিল ২৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পুরো আয়কর বিভাগ প্রত্যক্ষ কর আহরণ করে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এলটিইউর আহরণ ছিল ২৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ করের ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কর আহরণ করেছে এলটিইউ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন