বিআইডিএসের সেমিনারে বক্তারা

সিন্ডিকেট হঠাৎ শক্তিশালী হয়েছে, বাজারে নেই কোনো তদারকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষি খাতের বিকাশ নিয়ে গতকাল বিআইডিএস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনার ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দেশে গত কয়েক বছরে বাজার সিন্ডিকেট হঠাৎ অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, কিন্তু যথাযথভাবে বাজার তদারকি হচ্ছে না। এ কারণে ফসলের উৎপাদন বাড়লেও বাজারে পণ্যের দাম বেশির ভাগ সময় ঊর্ধ্বমুখী থাকছে। রাজধানীতে গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। দেশের কৃষি খাতের বিকাশ নিয়ে বিআইডিএসের সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়। এতে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র ফেলো ও কৃষি ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। বক্তারা বলেন, দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো হয়। দেশে খাদ্য উৎপাদন ৩ কোটি ৪০ বা ৭০ লাখ টন বলা হলেও এতটা নয়, এটা নিশ্চিত। না হলে দেশে খাদ্য আমদানি করতে হয় কেন? 

বাজার সিন্ডিকেটের বিষয়ে শাইখ সিরাজ বলেন, ‘নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় একটি ফুলকপি কৃষক ৩ টাকায় বিক্রি করে। তার পাশেই বাজারে তা বিক্রি হয় ১২ টাকায়। ট্রাকে ওঠার সময় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২২ টাকা। আমি এসব পণ্য অনুসরণ করে দেখলাম, কারওয়ান বাজার হয়ে শান্তিনগর বাজারে এসব ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকায়। কৃষককে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় অতিরিক্ত টাকা দালালে খায়।’ 

শাইখ সিরাজ আরো বলেন, ‘একইভাবে মানিকগঞ্জের ২০ টাকা কেজি মরিচ মোহাম্মদপুরে আসতে আসতে হয়ে যায় ৮০ টাকা। কোনো কারণ ছাড়াই ইসবগুলের ভুসির প্যাকেট আগে যেটা ৪০ টাকা ছিল, দাম হয়ে যায় ২৫০ টাকা। বাজার তদারকিতে ব্যবস্থাপনা নেই। তাই হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে যায়।’

কৃষির উন্নতিতে ভূমিকা রাখলেও গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে জানান বক্তারা। কৃষিজমি আশঙ্কাজনক হারে কমছে জানিয়ে তারা বলেন, উপকূলে সেচের অভাব ও লবণাক্ততায় ৪৪ লাখ হেক্টর জমি পড়ে থাকে। এসব জমিতে দুই-তিন ধরনের ফসল চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট পোলট্রি খামারিরা ঝরে পড়ছে জানিয়ে বক্তারা বলেন, একটি গ্রামে ৫০টি খামার ছিল আগে, এখন সেখানে হয়তো একটা বড় খামার আছে। যদি প্রান্তিক কৃষক অস্তিত্বহীন হয়ে যায়, তাহলে তারা কোথায় যাবে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন। আর নিরাপদ খাদ্যে কাজ করার অনেক কিছু আছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘সড়কে চাঁদাবাজি, পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের বিষয় সরকারকে দেখতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। তবে বাজারের দায়িত্ব সরকারের নেয়া উচিত নয়। সরকার শুধু বাজার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।’

কৃষির কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘কৃষক এখন ধানের চেয়ে ফল বা মাছে বেশি লাভ দেখলে সেটাই চাষ করবে। এখানে বাধা দেয়া ঠিক হবে না। কৃষককে নির্ধারণ করতে দিতে হবে, তারা কোনটা চায়। ধানের উৎপাদন ভবিষ্যতে কমবে, এটা ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। বাজার অর্থনীতির বড় খাত কৃষি। তাই এটাকে নিজের মতো কাজ করতে দিতে হবে।’ 

কৃষি পুরোপুরি বাণিজ্যিক হবে বলে মনে করছেন না সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, ‘এখানে জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আইল কাটা নিয়ে সমস্যা হয়। তাই চাইলেই লিজ নিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিক চাষাবাদ এখনই শুরু হবে না। এখন কৃষিকে লাভজনক করা উচিত।’

সমাপনী বক্তেব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কৃষি পুরোপুরি বাণিজ্যিক হবে না। প্রান্তিক ও বাণিজ্যিক দুই ধরনের চাষাবাদই সামনে থাকবে হয়তো।’ তিনি আরো বলেন, ‘কৃষি খাতে যে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে, তা দৃশ্যমান। কৃষকের খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আসছে; তাদের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। সেই সঙ্গে শহরের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন