ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাঁচ বছরেও শুরু হয়নি অবকাঠামো নির্মাণ

মুহাম্মদ আলমগীর কবীর, ময়মনসিংহ

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

বিনিয়োগ আকর্ষণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি রফতানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ময়মনসিংহে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালের নভেম্বর এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি কোনো অবকাঠামো। ঈশ্বরগঞ্জে নির্ধারিত স্থান শুধু বালি ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন করে নয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে সরকারিভাবে পাঁচটি বেসরকারি উদ্যোগে বাকি চারটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য ওই বছরের ১৬ মে ৪৮৭ দশমিক ৭৭ একর জমি নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৪ দশমিক ৮৪ একর বন্দোবস্ত ৩২ দশমিক ৯৩ একর অধিগ্রহণ করার কথা। ২০১৭ সালের আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় বেজার অনুকূলে সেই জমি বন্দোবস্ত দিতে প্রয়োজনী কিছু তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয়। একই মাসে বেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রকল্পটির স্থান পরিদর্শন করেন। সে সময় কিছু জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন তারা। পরে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ৪৯২ দশমিক ৩৬ একর জমি নিয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা- থেকে ২০২০ সালের মার্চ পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর রামমোহন মৌজায় ৪২৩ দশমিক ৬১ একর খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও ওই জমি নিয়ে মামলা চলছে। তাই বন্দোবস্ত দেয়ার আইনগত সুযোগ নেই। পরে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন একটি চিঠি দেয়া হয়। তাতে ২০০ একর জমি নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালের জুন তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিকল্প হিসেবে ২০০ একর জমির প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেন। এরপর অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্বাচিত স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন করে বালি ফেলে উঁচু করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর উচাখিলা ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তোলার প্রস্তাবনা ছিল। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অবস্থান হলেও কিছু অংশ ত্রিশাল সীমানায় রয়েছে। দুই উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছিল। তবে তা বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

উচাখিলা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ইপিজেড হলে ব্রহ্মপুত্র নদের দুই পারের মানুষের জীবন পাল্টে যেত। মানুষের কর্মসংস্থান হলে বেকারত্ব কমত এবং জীবনমান আরো উন্নত হতো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়মনসিংহে সরকারিভাবে কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল নেই। এটি চালু হলে এখানকার মানুষের জীবনমান পাল্টে যেত। এলাকার উন্নয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হতো। আমরা দ্রুত ইপিজেড বাস্তবায়ন চাই।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাইল হোসাইন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ২০০ একর জমি বন্দোবস্তের যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী অধিগ্রহণ করতে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। মন্ত্রণালয় থেকে নিদের্শনা এলে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা বারবার এটি বাস্তবায়নে চেম্বারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি। কিন্তু অগ্রগতি হয়নি। এটি বাস্তবায়ন হলে শিল্পায়নের পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থান হতো। অর্থনৈতিকভাবে ময়মনসিংহ জেলার গুরুত্ব আরো বাড়ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে ত্রিশাল থেকে ঈশ্বরগঞ্জের যোগাযোগ সহজ হবে। এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। তবে ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। জায়গাটি মাটি ভরাট করে রাখা হয়েছে। নতুন কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন