সময় মেনে ছাড়ছে ট্রেন মহাসড়কে ধীরগতি, লঞ্চ ছাড়ছে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রীদের চাপ বেশি থাকলেও গতকাল ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রায় সব ট্রেনই ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রেলপথে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে গত ১২ জুন। প্রথম দিন মোটেও ভালো কাটেনি বাংলাদেশ রেলওয়ের। সকালের একটি ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার প্রভাব পড়ে দিনের অন্যান্য ট্রেনেও; দেখা দেয় সূচি বিপর্যয়। তবে গতকাল ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। এদিন বেশির ভাগ ট্রেন চলাচল করেছে সময়সূচি মেনে। ফলে মানুষের চাপ বেশি থাকলেও স্বস্তি নিয়ে ঢাকা ছাড়ে ঘরমুখো মানুষ। 

রেলপথে স্বস্তি থাকলেও সড়কপথে যানবাহনের ধীরগতির কারণে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কে গতকাল দিনভর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট ও ধীরগতি দেখা গেছে। এর মধ্যে বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরে একটি কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে প্রায় ৩০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার ঘরমুখো মানুষের জন্য ১০টি বিশেষ ট্রেন যুক্ত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাতিল করা হয়েছে সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি। এর বাইরে শুধু ঈদের দিনের জন্য যুক্ত করা হচ্ছে আরো আটটি বিশেষ ট্রেন। রেলপথে এবার ঢাকা থেকে প্রতিদিন ৩৩ হাজার ৫০০ যাত্রী দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারবে। প্রয়োজনে এর সঙ্গে আরো ২৫ শতাংশ আসনবিহীন যাত্রীর যাতায়াতের সুযোগ দিচ্ছে রেলওয়ে। আজ নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। 

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় রেলপথে এবারের ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত নির্বিঘ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি আজও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’

রেলপথে স্বস্তি থাকলেও গতকাল দিনভর উত্তরাঞ্চলের ঢাকা-টাঙ্গাইল-রংপুর মহাসড়কে যানবাহন চলেছে থেমে থেমে। কোথাও কোথাও ছিল দীর্ঘ যানজট। বণিক বার্তার টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ও বঙ্গবন্ধু সেতুতে রাতে একাধিকবার টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে সাত কিলোমিটার এলাকায় যানজ‌ট সৃ‌ষ্টি হয়। গতকাল ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে ১৪ কিলোমিটার এলাকায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট কমতে থাকে। 

ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহনের ধীরগতি ও যানজট থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটসহ দেশের অন্যান্য সড়কে গতকাল যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। সড়কপথের পাশাপাশি ঈদযাত্রায় ভিড় বেড়েছে নৌপথেও। যাত্রী বাড়ার পাশাপাশি লঞ্চও বেড়েছে। অর্ধেক যাত্রী নিয়েই ঘাট থেকে ছাড়তে দেখা গেছে অনেক লঞ্চকে। কয়েকটি রুটে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। 

গতকাল বিকালে দেশের বৃহত্তম নৌ-টার্মিনাল সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যায় মর্নিং সান। লঞ্চটি পিরোজপুরের হুলারহাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। লঞ্চটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লাবু বলেন, ‘মর্নিং সানের অর্ধেক আসন ফাঁকা। সন্ধ্যা ৭টায় পারাবত-৮ নামে আমাদের আরেকটি লঞ্চ ছাড়বে। সেটাও মনে হয় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ছাড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘লঞ্চ ভর্তি না হলেও ‌ঈদ উপলক্ষে যাত্রী অনেক বেড়েছে। তবে সেটা আমাদের জন্য লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি। আমাদের এ রুটে আগে ১০টি লঞ্চ চলত। এখন পাঁচটি লঞ্চ বন্ধ রয়েছে। যে পাঁচটি চলছে সেগুলোও নিয়মিত নয়।’

বরিশাল রুটের ‘সুন্দরবন ১৬’ লঞ্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম খান বলেন, ‘যাত্রী একেবারেই কমে গেছে। পাঁচ মিনিট পর পর বাস; তাই বেশির ভাগ যাত্রী বাসেই যাচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে আবার লঞ্চের সংখ্যা বেড়েছে। এ রুটে ১৪টি লঞ্চ চলছে। একেকটির যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় দেড় হাজার। কিন্তু আমরা যাত্রী পাচ্ছি ৭০০-৮০০ জন করে।’ 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তফা কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন টিম সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাইনি। আমি নিজে ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট নিচ্ছি। আশা করি এবারো স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারব।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন