‘কালকে আমি দুঃখে কানছি, বাপ-মায় নাই দেইখা ঈদে ঢাকা আছি’

শফিকুল ইসলাম

রাজধানীর ফার্মগেট ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক কনস্টেবল মাসুদ। তার পাশেই দাঁড়ানো পুলিশ সার্জেন্ট শরীফ। ছবি : বণিক বার্তা

‘বাপ-মায় বাঁইচা নাই দেইখা ঢাকা আছি। থাকলে মনের টান লাগতে, বাড়িতে যাইতাম। কালকে আমি দুঃখে কানছি। ঈদের ছুটি পাই নাই, বোনাসও পাই নাই’—ঈদুল আজহায় বাড়িতে যেতে না পেরে নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার স্টেশনের নিরাপত্তা প্রহরী (গার্ড) আজম।

ঈদে সবকিছু বন্ধ থাকলেও ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে নিরাপত্তা প্রহরী কারোই যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। আগের চেয়ে ব্যস্ততা কম থাকলেও দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবার-পরিজনহীন ঈদ পালন করছেন তারা। রাজধানীর সায়েদাবাদ, বাসাবো, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মতিঝিল, গুলশান এলাকা ঘুরে দেখা গেল নিরাপত্তার দায়িত্বে রত এসব মানুষের প্রিয়জনহীন ঈদ উদযাপন কতেটা বেদনার। তাদের চোখ-মুখই যেন বলে দিচ্ছে এক মন খারাপের গল্প।

মেট্রোরেলের কারওয়ান বাজার স্টেশনের নিরাপত্তা প্রহরী (গার্ড) আজম                                                          

নিরাপত্তা প্রহরী আজম বণিক বার্তাকে জানান, মানিকগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। কিন্তু সেখানে নিয়মিত কাজ ও রোজগার না থাকায় ঢাকায় এসে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করছেন। এখানে চাকরি শুরু করেছেন ১৬ দিনের মতো হয়েছে। বাড়িতে দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ছুটি না পাওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি তার। 

বিকাল ৪টায় ফার্মগেট ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায় উল্টো পথে আসা সাইকেলচালকের পথরোধ করে কথা বলছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল মাসুদ। তার পাশেই দাঁড়ানো পুলিশ সার্জেন্ট শরীফ। কেমন ঈদ কাটছে জানতে চাইলে পুলিশ সার্জেন্ট শরীফ বলেন, ‘আমাদের প্রতি ঈদে ছুটি দেয়া হয় না। যেকোনো এক ঈদে ছুটি নিতে হয়। স্ত্রী-বাচ্চা গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে থাকে। আমি একাই ধানমন্ডিতে বাসা নিয়ে থাকি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য আমাদের পরিবার-আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এজন্য একটু মন খারাপ হয়। তবে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি ভেবে প্রশান্তি পাই।’

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী লিমন হালদার                                                                                           

কথা হয় প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক নিরাপত্তা প্রহরী লিমন হালদারের সঙ্গে। পটুয়াখালীর এক কলেজের বিবিএর প্রথম বর্ষে পড়েন তিনি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পড়াশোনার পাশাপাশি নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করছেন তিনি। 

লিমন হালদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঈদে পরিবার ছাড়া থাকাটা আসলেই কষ্টের। মন খারাপ তো লাগেই। কিন্তু ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য সবসময়ই কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। একটি শাখায় যদি ছয়জন গার্ড থাকে তার মধ্যে এক-দুজন ছুটি পান। বাকিদের রোস্টার ডিউটি করতে হয়। পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা এক কষ্টের, আবার ঈদে একসঙ্গে হতে না পারা আরেক কষ্টের বিষয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন