![](https://bonikbarta.net/uploads/news_image/news_388101_1.jpg?t=1719404770)
কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির মাংস। রাজধানীর তেজগাঁও, কারওয়ান
বাজার রেল গেইট, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, লালবাগ, চকবাজার, কেল্লার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায়
ভাসমান দোকানে কোরবানির মাংস বিক্রি হতে দেখা গেছে। নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ যারা
সারা বছর মাংস চেখে দেখতে পারেনি তারা এসে ভিড় করেছেন ভাসমান এ হাটে। যাদের কোরবানি
দেয়ার সামর্থ্য নেই কিংবা অল্প দামে মাংস কিনতে চায় তারাই মূলত এসব মাংসের ক্রেতা।
মাংসের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে গরুর ভুঁড়ি, পায়া।
বাসাবাড়িতে গিয়ে যারা মাংস সংগ্রহ করেন কিংবা কসাই হিসেবে সারা দিন
কাজ করে যে পরিমাণ মাংস পেয়েছেন সেগুলো বিক্রি করার জন্যই মূলত এ ভাসমান হাট। সারা
দিন মাংস সংগ্রহের পর নিজেদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাংস বিক্রি করছেন দিনমজুররা। মাথার
মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, হাড়সহ সলিড মাংস ৫০০ টাকা এবং ১৫০-২০০
টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভুঁড়ি।
তবে ভাসমান এসব হাটে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেল ভিন্ন এক চিত্র। অনেক
মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও অর্থের জন্য প্রতিবেশীদের দেয়া মাংস না খেয়ে বিক্রি করতে
এসেছেন।
এক কেজির কিছুটা বেশি খাসির মাংসের একটি প্যাকেট নিয়ে তেজগাঁও রেলগেটে
ঘুরতে দেখা যায় ৪৫ বছর বয়স্ক এক লোককে। মাংস বিক্রির জন্য খুঁজছেন ক্রেতা। তবে তার
পোশাক দেখে মনে হবে তিনিই কারো জন্য মাংস নিয়ে যাচ্ছেন।
তার সঙ্গে কথা হয় বণিক বার্তার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সকালে
পানি ভাত খেয়ে বের হইছি। হোমিও ডাক্তার ছিলাম আমি, করোনায় সব শেষ হয়ে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
সামনে আমার চেম্বার ছিল। কিন্তু সব বন্ধ হয়ে এখন বেকার। বাস্তবতা অনেক কঠিন। স্ত্রীকে
অনার্স পাস করাইছি। এখন সে আমার সঙ্গে আর থাকে না। মেয়েটা তার সঙ্গে থাকে। আমি একদিন
একেকজনের বাসায় থাকি। কাজ নাই।’ কথা চলতে থাকার মধ্যেই তার সঙ্গে দরকষাকষি চলে কয়েকজন
ক্রেতার সঙ্গে। ৭০০ টাকায় বিক্রি করেন এক কেজির খাসির মাংস।
কারওয়ান বাজার ভাসমান হাটে ছবি তুলতে গিয়ে জানা গেল আরেক ভিন্ন গল্প।
ক্যামেরা বের করে ক্লিক করা শুরু করতেই ভাসমান হাটের এক বিক্রেতা বলে উঠলেন, ‘ভাই ছবি
তুইলেন না, পরিবার জানে আমি চাকরি করি। কিন্তু এখন সারাদিন কসাইর কাজ করে কিছু মাংস
পাইছি সেগুলা বিক্রি করতে আসছি। এসব ছবি পরিবার দেখলে সংসার থাকবে না।’
তেজগাঁও রেল লাইনের পাশে ভাসমান মাংসের হাটে কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে।
কত দিয়ে কিনলেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই আমার ২ টা অটো গাড়ি আছে। সবই আছে। কিন্তু
দোকানের মাংস আর এ কোরবানির মাংস তো এক না। শখ করে কিনতে আসছি। দেনা আছে তাই কোরবানি
দিতে পারি নাই।’