একনজরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট

বণিক বার্তা অনলাইন

সংগৃহীত

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এটা প্রথম বাজেট।

মূল্যস্ফীতির বড় চাপের মধ্যে অর্থমন্ত্রী এ বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। এ পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশ থাকবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ শতাংশ ছিল।

মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার আশার বাণী শোনানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়, পরবর্তী সময়ে তা কমিয়ে করা হয় সাড়ে ৬ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি কমিয়ে বড় প্রবৃদ্ধির আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন সেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

এবার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। আর দেশী-বিদেশী ঋণের সুদ পরিশোধ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবার মূলধন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপি বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ

খাতভিত্তিক বরাদ্দ হলো— প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি, জননিরাপত্তা খাতে ২৬ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৬ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ২১১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে দুই হাজার ১৩০ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা, শিল্প খাতে ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি এবং ধর্ম ও সংস্কৃতি খাতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

দাম বাড়বে যেসব পণ্যের

সিগারেট, মোবাইল ফোনের সিমকার্ড, মোবাইলের কল রেট, আইসক্রিম, বৈদ্যুতিক মিটার, গাড়ি, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস, কাজুবাদাম, এসি, ফ্রিজ উৎপাদনে ব্যয়, পানির ফিল্টার, এলইডি বাল্ব, সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সন খরচ, জেনারেটর, আমদানি করা ম্যাকরেল মাছ, প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণ ব্যয়, ইট, নিরাপত্তা সেবা, হাটবাজারের ইজারা ও হাসপাতালের সরঞ্জাম আমদানির ব্যয় বাড়বে।  

দাম কমছে যেসব পণ্যের

প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭ প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হচ্ছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০ পণ্য। এছাড়া গুঁড়ো দুধ, চকলেট, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, নির্মাণ সামগ্রী, সুইচ-সকেট, ইলেকট্রিক মোটর, উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে খরচ, মোটরসাইকেল, কিডনি ডায়ালাইসিসের ফিল্টার, কার্পেট, ডেঙ্গু কিট ও ক্যান্সার চিকিৎসা খরচ কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন