পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত বাংলাদেশের দুই জেলা

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি— নিউজ ১৮।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে কয়েকদিন ধরেই চলছে ভারী বৃষ্টিপাত। ভারতীয় সংবামাধ্যদমগুলো বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরবঙ্গে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ক্রমে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরেই। এর মধ্যে অতিবর্ষণের সর্তকতা জারি হয়েছে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে। দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর এই তিন জেলার কোনো কোনো অংশে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। এর ফলে জেলাগুলোতে নতুন করে নদীর পানির স্তর বাড়াসহ প্লাবন, এমনকি পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশটির হাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ৪ দিনের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বাকি অংশ ও দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমী বায়ু এগোতে পারে। উত্তর বিহার থেকে দক্ষিণবঙ্গের দক্ষিণাংশ অবধি একটি অক্ষরেখা গিয়েছে। এমতাবস্থায় বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঢুকছে উত্তরবঙ্গের ওপর। যে কারণে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরের কিছু জেলায়।

এদিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভারতের ওইসব এলাকার কাছাকাছি বা সীমান্তে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ ও সিলেট এলাকার সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ জেলা সদর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুরসহ অধিকাংশ উপজেলার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে জেলা সদরের সঙ্গে ওইসব উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, ষোলঘর, মধ্যবাজার, সাহেববাড়ি ঘাটসহ আবাসিক অনেক এলাকা। ভোগান্তিতে পড়েছে শহরবাসীসহ গ্রামগঞ্জের পানিবন্দি মানুষ। সিলেটেও প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বেলা ৩টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে ৪ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে সীমান্ত নদ-নদীগুলো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বৃষ্টি ও ঢলের পানি পাহাড়ি নদী দিয়ে এপারে নামায় জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের ৫০টি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার নিচু এলাকা। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র ১০০ মিটার সংযোগ সড়কটিতে পানি উঠে যাওয়ায় তিনদিন ধরে জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ডলুরা সড়কটি প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

এদিকে ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ সীমান্তবর্তী সদর উপজেলার বনগাঁও নখরিয়া ছড়া সীমান্ত নদী, ধোপাজান চলতি নদী, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা ও পাটলাই নদী এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা, চিলাই ও ছেলা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুতবেগে প্রবাহিত হয়ে জেলার প্রধান নদী সুরমা, কালনী ও কুশিয়ারা কানায় কানায় ভরপুর হয়ে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের বন্যার পানি ছাতক উপজেলায় আঘাত হেনে জেলার অন্যতম দেখার হাওর ও জাউয়ার হাওর অতিক্রম করে সুনামগঞ্জ শহরে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করছে নতুন নতুন এলাকা। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন