সিপিডির বাজেট প্রতিক্রিয়া

লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত করা উচিত, রাতারাতি এত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় গতকাল নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সিপিডি ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

বাজেট লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত রাতারাতি এত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জাতীয় সংসদে অর্থবিল উপস্থাপনের পর গতকাল সন্ধ্যায়জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিপিডির কার্যালয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। নতুন সরকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ প্রতিমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়কে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার এটি শেষ বাজেট। আমাদের যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, সে সংকটগুলো মোকাবেলার জন্য বাজেট একটা গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। কারণেও এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মোটা দাগে তিন-চারটি পয়েন্ট নিয়ে বলব। প্রথমেই যেই বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো মূল্যস্ফীতি কমানো, সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া ব্যাপারে বাজেট কী করেছে। একটি হলো রাজস্ব কাঠামোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থাৎ কর কাঠামোতে পরিবর্তন এনে নিম্নআয়ের মানুষকে কোনো ধরনের স্বস্তি দেয়া হয়েছে কিনা।

এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় থাকা করধাপ কর হারের পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বলে জানান তিনি। তবে অপ্রদর্শিত বা অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘অপ্রদর্শিত বা কালো টাকার ওপর যে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেগুলোকে সাদা করা যাবে, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটা নৈতিকভাবে অর্থনৈতিকভাবে কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সামাজিক ন্যায় দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

মূল্যস্ফীতি কমানোর পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড়কে ভালো প্রস্তাব বলে মন্তব্য করেন ফাহমিদা খাতুন। কিন্তু পদক্ষেপগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘যেকোনো একটি নীতি মুদ্রা বা বাণিজ্যনীতি এককভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। খাতগুলো এক অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত সেজন্য আমাদের বিষয়টাও খেয়াল রাখতে হবে।

তার মতে, মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে নিম্ন বা মধ্যআয়ের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাজেটের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অর্থ বরাদ্দ করার একটা সুযোগ থাকে। জিডিপির হিসাবে বা মোট বাজেটের আকারের দিক থেকে তা সামান্য বেড়েছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রতি বছরই রাজস্ব বোর্ডের ওপর যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় সেটা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। গত ১০ বছরে দেখা গেছে কোনোবারই সেটা প্রতিপালন করা সম্ভব হয় না। এর অন্যতম কারণ তাদের ওপরে বিরাট লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়।

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত করা উচিত, রাতারাতি এত প্রবৃদ্ধি করা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য নির্বাহী পরিচালকের। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত জুসের ওপর করারোপ করা হয়েছে বা কল রেটের ওপরএগুলো আসলে প্রকারান্তরে ভোক্তাদের ওপর গিয়ে পড়বে। মূল্যস্ফীতির চাপের পাশাপাশি ধরনের বাড়তি কর মানুষের জীবন যাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলবে।

ঋণের দায় পরিশোধ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেট ঘাটতির অন্যতম একটা অংশ আসবে ব্যাংক ঋণ থেকে। সরকার চলতি অর্থবছরে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে, আগামী অর্থ বছরেও ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বাড়বে। ঋণের ওপরে নির্ভরতা বাড়ছে সেটা স্পষ্ট।

সবশেষে তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে শতাংশ। গত ২৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি শতাংশের ওপরে ১০ ছুঁইছুঁই। এখন আমরা এক বছরের মধ্যে সাড়ে শতাংশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনব কীভাবে। লক্ষ্যমাত্রাগুলোয় বাস্তবতার ছোঁয়া নেই বলে আমাদের মনে হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন