ইউএই ও ইসরায়েল চুক্তি

কেমন হবে মধ্যপ্রাচ্যে এর অর্থনৈতিক প্রভাব

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউএইর সঙ্গে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক বিতর্কিত চুক্তির ফলে আরববিশ্বে কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন মত প্রকাশ করে আসছেন। কেউ কেউ বলছেন, চুক্তির ফলে ইরানের নাকের ডগায় ইউএইর সঙ্গে বাণিজ্য করবে তাদের তীব্র প্রতিপক্ষ। আবার এতে ইরানের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। খবর এএফপি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েল ইউএইভিত্তিক ইরানি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপন হবে; যা রাজনীতিতে সুবিধা নিয়ে আসতে পারে।

ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের রিসার্চ ফেলো সিনজিয়া বিয়ানকো বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ইউএইতে থাকা ইরানিরা ইসরায়েলিদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, যেসব ইরানি দুবাই বা ইউএইতে রয়েছেন, তারা সাধারণত রকম বাস্তববাদী মানুষ, যারা রাজনৈতিক জটিলতায় আটকে থাকতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই চুক্তিকে প্রতিবন্ধকতা নয়, সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করছেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে প্রথম উপসাগরীয় দেশ হিসেবে চুক্তিতে পৌঁছল তেলসমৃদ্ধ ইউএই। ইরানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে চুক্তির ফলে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে বলে শঙ্কা ব্যক্ত করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো।

তেহরানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের পর তিনটি আমিরাতি দ্বীপ জবরদখলের অভিযোগ তুলেছে আবুধাবি। ইউএইর ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের সঙ্গে তিক্ততার জেরে ২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক অবনমন করেছে আবুধাবি।

তেহরান আবুধাবির মধ্যে তিক্ততা সত্ত্বেও তারা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত। কূটনীতিক সম্পর্ক বহাল রাখার পাশাপাশি তারা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বহাল রেখেছে তারা। এজন্য উভয় পক্ষই শতকোটি ডলারের দ্বিপক্ষিক বাণিজ্য বহাল রেখেছে তারা।

এলেন আর ওয়াল্ড নামে আটলান্টিক কাউন্সিলস গ্লোবাল এনার্জি সেন্টারের এক সিনিয়র ফেলো বলেন, কোনো দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য সম্পর্ক বাতিল করার মতো পরিস্থিতিতে নেই তেহরান। সেখানে ইউএই তো একেবারের ঘরের পাশের প্রতিবেশী। ইরান চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক ধরে রেখেছে, যা আবার ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য করে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে ইউএইর চুক্তির খবর প্রকাশের দুদিনের মধ্যে, উপসাগরীয় অঞ্চলে ইসরায়েলের জন্য পথ খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে ইউএইর বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। হুঁশিয়ারির জবাবে তেহরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় ইউএই। কিন্তু তার একদিন বাদে আবুধাবি জানায়, চুক্তি তেহরানের বিপক্ষে নয়।

তবে চুক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালিতে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভৌগোলিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি হয়ে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা অন্যান্য অংশের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলো।

এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) বরাতে জানা গেছে, সমুদ্রপথে মোট তেল পরিবহনের ৩৫ শতাংশ সম্পাদিত হয় হরমুজ প্রণালি হয়ে।

ইরান ইউএইর মধ্যে শতকোটি ডলারের বাণিজ্য সম্পাদিত হয়। গত বছর তেলসমৃদ্ধ দেশ দুটির মধ্যে ৮৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএইর পরিসংখ্যান বিভাগ। অবশ্য ২০১৮ সালে দুই দেশের মধ্যে হাজার ৫২০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছিল। গত বছরের মে মাসে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে উপসাগরীয় দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যের আকার প্রায় অর্ধেক কমে যায়।

উভয় দেশের বন্দরগুলোয় সেলফোন, গাড়ি, হিমায়িত মাংস, পোশাক অন্যান্য পণ্য নিয়মিত বিনিময় হতে দেখা যায়। ইউএইজুড়ে আট হাজারেরও বেশি ইরানি কোম্পানি এবং ছয় হাজারের মতো ট্রেডার্স কাজ করে যাচ্ছে।

ইরানি কর্মকর্তাদের প্রাক্কলনে জানা যায়, ইউএইতে পাঁচ লাখেরও বেশি ইরানি অবস্থান করছে। একই সঙ্গে প্রতি বছর প্রায় লাখ ৫০ হাজার ইরানি ইউএইতে বেড়াতে আসে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন