সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ

মার্কিন এসভিবির মতো বিপর্যয়ের শঙ্কা চীনের ব্যাংক খাতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বেইজিংয়ে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স

সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ ভাবা হলেও সুদহার তারল্য সংকট মিলিয়ে তৈরি হতে পারে ঝুঁকি, যা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো অর্থনীতিতে। সম্প্রতি চীনের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোয় বিনিয়োগের এমন প্রবণতা বাড়ায় সংশ্লিষ্ট খাতের নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়ে সতর্কবার্তায় উদাহরণ হিসেবে মার্কিন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংককে (এসভিবি) সামনে আনা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, গত বছর এমন এক পরিস্থিতিতে এসভিবির পতন ঘটে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

এরই মধ্যে কম সুদহারে দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ড নিয়ে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর পদক্ষেপ নিয়ে অস্বস্তির ইঙ্গিত দিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক পিপলস ব্যাংক অব চায়না। এসব ক্ষেত্রে বাজারে সুদহার পরিবর্তন বন্ডে বিনিয়োগকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। মার্কিন এসভিবির বেশির ভাগ অর্থ বিনিয়োগ ছিল বন্ডে। নিরাপদ বিনিয়োগ ধরা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদহার বাড়ানোয় মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ফলে কমে যায় বন্ডের মূল্যমান।

সিকিউরিটিজ মার্কেট ডাটা বিশ্লেষণ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিএনপি পারিবাস জানায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর বন্ড খাতে নিট ব্যয় ছিল ২৭ হাজার কোটি আরএমবি ( হাজার ৭০০ কোটি ডলার)

গত সপ্তাহে পিপলস ব্যাংক চায়নার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘যদি কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে প্রচুর পরিমাণে তহবিল আটকে থাকে এবং দায়জনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে, তবে মূল্য পুনর্নির্ধারণের ফলে বন্ডের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।

সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের উদাহরণ টেনে বলা হয়, এতে তারল্য সংকটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।

২০২৩ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসভিবির গচ্ছিত সম্পদ অধিগ্রহণ করে। আশঙ্কা করা হয়েছিল, সুদহার বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ওপর প্রভাব ফেলেছে। থেকে সৃষ্ট জটিলতা মোকাবেলা করতে পারবে না বিদ্যমান আমানত। এটি ছিল মার্কিন ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংকিং ব্যর্থতা।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনের আবাসন খাতে সৃষ্ট সংকট পুরো অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। দেশটির বেশির ভাগ বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল খাত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথতার প্রভাব শেয়ারবাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। আর্থিক খাতের এমন সংবেদনশীল সময়ে দেশটির আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো ঋণদানে অক্ষম হলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির সাম্প্রতিক অস্বস্তিগুলো আরো বাড়তে পারে।

ইকুইটি আবাসন খাতের সংকট থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো জানুয়ারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি সার্বভৌম বন্ডে অর্থ জমা করছে, যা সরকারি ঋণের ব্যয়কে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে সরকারি ঋণের দিক থেকে নিরাপদ। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এসভিবির কথা স্মরণ করিয়ে বিএনপি পারিবাসের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা ওয়াং জু বলেছেন, ‘ছোট ব্যাংকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পেছনে ছোটা ঝুঁকিপূর্ণ। যদি কিছু ভুল হয়ে যায় সুদ বাড়তে শুরু করে, তাহলেবড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

সম্প্রতি সরকারি ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়া সেদিকে ইঙ্গিত করে। বর্তমানে চীনে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদহার প্রায় দশমিক শতাংশে নেমে এসেছে, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এছাড়া মার্চে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদ সর্বনিম্ন রেকর্ড দশমিক - পৌঁছে।

এরই মধ্যে চীনের পূর্ব মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশে স্থানীয় নিয়ন্ত্রকরা ছোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করতে বলেছে। একই সঙ্গে তারল্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।

সরকারি পদক্ষেপ সত্ত্বেও চীনের আন্তঃব্যাংক বন্ড বাজারের সেকেন্ডারি ট্রেডিং ডাটা বলছে, গ্রামীণ ব্যাংকগুলো মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে ৪০ হাজার কোটি আরএমবি মূল্যের সার্বভৌম বন্ড কিনেছে। বিপরীতে চীনা মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সময়ের মধ্যে অনেক কম কিনেছে, এর পরিমাণ হাজার ৮০০ কোটি আরএমবি। এছাড়া বড় চীনা ব্যাংকগুলো ২২ হাজার কোটি আরএমবির বন্ড বিক্রি করেছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিআইসিসির গবেষণা বিভাগের স্থায়ী-আয় বিষয়ক শীর্ষ বিশ্লেষক চেন জিয়ানহেং বলেন, ছোট ব্যাংকগুলো বড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় সরকারি বন্ডে আগ্রাসীভাবে বেশি বিনিয়োগ করছে।

২০১৬ সালে চীনের বন্ড মার্কেটে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা যায়, যা এখনো চীনা কর্মকর্তাদের আতঙ্কিত করে থাকে। কারণে সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি হস্তপেক্ষ বাড়তে পারে। ব্যাংক অব চায়নার কর্মকর্তারা সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে জানান, তারল্য সংকট মোকাবেলায় সেকেন্ডারি মার্কেটে হস্তক্ষেপের সময় বন্ড ইস্যু বাড়াতে পারে বেইজিং। দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং মার্চে বলেছিলেন, অর্থনীতিতে সহায়তা করার জন্য চলতি বছর অতি দীর্ঘমেয়াদি ট্রিলিয়ন আরএমবির বিশেষ বন্ড ছাড়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন