জনবল, অবকাঠামোর স্বল্পতা

‘চোখে দেখে’ নিয়ন্ত্রণ করা হবে যানবাহনের গতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

দেশের সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের জন্য যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। গতিসীমা লঙ্ঘনের জন্য রাখা হয়েছে জেল-জরিমানার বিধান। শুধু নেই গতিসীমা লঙ্ঘন করা যানবাহন শনাক্তের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশ গতি শনাক্তের এক ধরনের যন্ত্র ‘‌স্পিড গান’ ব্যবহার শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে অতিরিক্ত গতির যানবাহন শনাক্তে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। এমন প্রেক্ষাপটে আপাতত ‘‌চোখে দেখে’ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে বিআরটিএ। ‘‌মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪’ প্রণীত হয়েছে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের আলোকে।

গতিসীমা সম্পর্কিত এক বিআরটিএর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়কে (‘এ’ ক্যাটাগরি) পণ্যবাহী যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৬০ কিলোমিটার। আর জাতীয় মহাসড়কে (‘এ’ ক্যাটাগরি) চলতে পারবে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার গতিতে। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে ও জাতীয় মহাসড়কে (‘এ’ ক্যাটাগরি) প্রাইভেট কার, মাইক্রো ইত্যাদি হালকা যাত্রীবাহী মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এ দুই ধরনের সড়কে বাস-মিনিবাসসহ যাত্রীবাহী ভারী যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমাও হবে ৮০ কিলোমিটার। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৬০ কিলোমিটার। আর জাতীয় মহাসড়কে (‘এ’ ক্যাটাগরি) চলতে পারবে সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার গতিতে। ট্রেইলরযুক্ত আর্টিকুলেটেড মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ৫০ কিলোমিটার।

সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, গতিসীমা লঙ্ঘনের শাস্তি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড।

নির্দেশিকা এরই মধ্যে কার্যকর করা শুরু হয়ে গেছে বলে বণিক বার্তার কাছে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি বলেন, ‘‌বিআরটিএ এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ কাজ করছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর লোকজন মাঠে আছে। বিআরটিএ আছে, জেলা পুলিশ আছে, হাইওয়ে পুলিশ আছে, মেট্রোপলিটন পুলিশ আছে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা—সবারই ম্যাজিস্ট্রেট আছে। সবাই কাজ করছে।’

গতিসীমা কীভাবে নিরূপণ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছে স্পিড গান আছে। বিআরটিএও কিছু স্পিড গান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় কম এ কথা ঠিক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন যেটা করা হচ্ছে তা হলো ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ। চোখে দেখেই কিন্তু বেশির ভাগ সময় বোঝা যায় কোন গাড়ি গতিসীমা লঙ্ঘন করছে। সে অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, ‘দেশের অনেক সড়কে গতিসীমা সম্পর্কিত কোনো সাইন সিগন্যাল নেই। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলোয় এ প্রবণতা বেশি। আবার রাজধানী ঢাকাতেও কিন্তু সড়কগুলোয় গতিসীমা নির্দেশক সাইন সিগন্যাল খুব একটা দেখা যায় না। আমরা যে নির্দেশিকা তৈরি করেছি তা গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের একটি পদক্ষেপ। এ নির্দেশিকা দেখেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো সংস্থাগুলো। পর্যায়ক্রমে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন