সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিবি প্রধান

এমপি আজীম হত্যার পরিকল্পনা হয় ঢাকায়, বাস্তবায়ন কলকাতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার পরিকল্পনা হয় ঢাকাতে। কিন্তু সুযোগের ঘাটতি থাকায় পরবর্তীতে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় কলকাতায়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত তিনজনের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে হারুন বলেন, ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরায় বসে একাধিকবার আলোচনা করেছে হত্যাকারীরা। আনারকে হত্যা করতে প্রথমে তারা বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ডিএমপির ডিবির তদন্ত সক্ষমতার কথা চিন্তা করে তারা দেশের বাইরের মাটিতে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত মাসের ২৫ তারিখ কলকাতায় তারা বাসা ভাড়া করে। নিহত সংসদ সদস্যের বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন, তার বান্ধবী এবং পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমান উল্লাহ আমান ওরফে শিমুল গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা থেকে বিমানে করে কলকাতায় গিয়ে সে বাসায় ওঠে। মূলত পরিবার নিয়ে থাকার তথ্য দিয়ে বাড়ির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে।

তিনি বলেন, হত্যাকারীরা দুই মাস ধরে সংসদ সদস্যকে নজরদারিতে রাখছিল। কখন তিনি কলকাতায় যান তার খবর রাখছিল। সংসদ সদস্য বিভিন্ন সময়ে কলকাতায় যেতেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন বাস করেছেন। সেখানে তার বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। তারা এ সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। এমপি আনার কলকাতায় গিয়ে তার বন্ধু গোপালের বাসায় গিয়ে ওঠেন। তারা জানত ১২ মে সংসদ সদস্য কলকাতায় যাবেন। হত্যার পরিকল্পনাকারীরা ৩০ এপ্রিল কলকাতায় গিয়ে স্থানীয় দুজনকে ঠিক করে। তারা হলো– জিহাদ ওরফে জাহিদ ও সিয়াম। হত্যার পরিকল্পনাকারী শাহীন হত্যার পর কোন গাড়ি ব্যবহার করা হবে, কাকে কত টাকা দিতে হবে সেগুলো ঠিক করে ১০ মে বাংলাদেশে ফিরে আসেন। নিহত সংসদ সদস্য কলকাতায় যাওয়ার পর ১৩ তারিখ ওই বাসায় যান। যাওয়ার পথে একটি সাদা গাড়িতে করে ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি তাকে নিয়ে যায়। গাড়িটি কিছু পথ যাওয়ার পর হত্যাকারী আমান উল্লাহ সে গাড়িতে ওঠে। গাড়িটির চালক ছিল রাজা।

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সে বাসায় (নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেন) যাওয়ার পর মোস্তাফিজসহ তারা বাসায় প্রবেশ করে। বাসাটিতে আগে থেকে জাহিদ ও সিয়াম অবস্থান করছিল। ১৩ তারিখ দুপুরে ২টা ৫১ মিনিটে বাসায় প্রবেশ করেন আনার। এর ৩০ মিনিটের মধ্যেই হত্যা করা হয় তাকে। হত্যার পরে ঘাতকরা সংসদ সদস্যের মোবাইল ফোন দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে খুদেবার্তা পাঠায়। এরপর তারা মরদেহের হাড় থেকে মাংস আলাদা করে। পরবর্তীতে দুটি ব্রিফকেসে করে জিহাদ ও সিয়াম মরদেহ গাড়িতে করে ফেলে দেয় যাতে আনারের চিহ্ন না থাকে। কাজ শেষ করে ১৫ তারিখ আমানউল্লাহ আমান ও শাহীনের প্রেমিকা শিরিস্তি দেশে ফিরে আসে। সবাই ফিরে আসায় হত্যার মাস্টারমাইন্ড শাহীন বিমানে করে দিল্লি, সেখানে ২ ঘণ্টার ট্রানজিট নিয়ে কাঠমান্ডু যায়। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে চলে যান।

দীর্ঘদিনের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীনের পরিকল্পনায় হত্যার কাজটি করেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানউল্লাহ আমান ওরফে শিমুল।

কলকাতায় গত ১৩ মে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনারকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, লাশ গুমের জন্য পৈশাচিকভাবে মরদেহ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঘটনায় জড়িত মূল হত্যাকারীসহ গ্রেফতারকৃত তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের এসব তথ্য জানায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন